সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। এরপর নামাজ ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوۃَ وَ اتَّبَعُوا الشَّهَوٰتِ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیًّا اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا
‘তাদের পরে এলো এমন এক অসৎ বংশধর যারা নামাজ বিনষ্ট করলো এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। সুতরাং শিগগির তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে; তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা মারইয়াম: আয়াত ৫৯-৬০)
নামাজ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে এ আয়াত সম্পর্কিত এক হাদিসে এসেছে, এদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ষাট বছরের পর থেকে খারাপ উত্তরসূরিদের আবির্ভাব হবে, যারা নামাজ বিনষ্ট করবে, প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে, তারা অচিরেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জাহান্নামে নিপতিত হবে। তারপর এমন কিছু উত্তরসূরি আসবে যারা কোরআন পড়বে অথচ তা তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নভাগে যাবে না। আর কোরআন পাঠকারীরা তিন শ্রেণির হবে: মুমিন, মুনাফিক এবং পাপিষ্ঠ। বর্ণনাকারী বশীর বলেন, আমি ওয়ালিদকে এ তিন শ্রেণি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কোরআন পাঠকারী হবে অথচ সে এর উপর কুফরকারী, পাপিষ্ঠ কোরআন পাঠ্যকারী হবে যে এর দ্বারা নিজের রুটি-রোজগারের ব্যবস্থা করবে। আর ঈমানদার কোরআন পাঠ্যকারী হবে যে এর ওপর ঈমান আনবে।’ [মুসনাদে আহমাদ, ইবনু হিব্বান)
হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ’নামাজ নষ্ট করলো’ এর অর্থ এই নয় যে, নামাজ সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেছে। বরং নির্দিষ্ট সময়ের পর আদায় করেছে।’ আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন-
فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَ ۙ
‘অতএব সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের নামাজে অমনোযোগী।’ (সুরা মাউন : আয়াত ৪-৫) অর্থাৎ তারা নামাজের ব্যাপারে আলস্য ঔদাসিন্য প্রদর্শন করে থাকে।
হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-
الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَ অর্থাৎ যারা তাদের নামাজের সময় বিলম্বিত করে। এই ধরনের লোকদের কোরআন অবশ্য নামাজি বলে আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু নামাজ আদায়ে আলস্য ও ঔদাসিন্য করার কারণে তাদেরকে ‘ওয়াইল’ বা কঠিন শাস্তির সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে। কারও কারও মতে জাহান্নামের কুপ বিশেষকে ‘ওয়াইল’ বলা হয়েছে। এতে পৃথিবীর পাহাড়-পর্বতগুলো নিক্ষেপ করা হলে এর ভীষণ উত্তাপে পাহাড়-পর্বতের পাথরগুলো পর্যন্ত গলে যাবে। এ স্থান এমন লোকের আবাসস্থল হলে যারা নামাজ সম্পর্কে উদাসীন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর বিলম্বে বা দেরিতে নামাজ আদায় করে। তবে তারা অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে মুক্তির আশা করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ৯)
এখানে আল্লাহ তাআলা খাঁটি মুমিনদেরকে সম্বোধন করে সতর্ক করছেন যে, তোমরা মুনাফিকদের ন্যায় দুনিয়ার মহব্বতে মগ্ন হয়ে যেয়ো না। যেসব বিষয় মানুষকে দুনিয়াতে আল্লাহ থেকে গাফেল করে, তন্মধ্যে দুটি সর্ববৃহৎ-ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি। তাই এই দুটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নতুবা দুনিয়ার যাবতীয় ভোগ-সম্ভারই উদ্দেশ্য। আয়াতের সারমর্ম এই যে, ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততির মহব্বত সর্বাবস্থায় নিন্দনীয় নয়। কিন্তু সর্বদা এই সীমানার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এসব বস্তু যেন মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে দেয়। এখানে ‘আল্লাহর স্মরণের’ অর্থ কোনো কোনো তফসীরবিদের মতে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কারও মতে হজ ও জাকাত এবং কারও মতে কোরআন। হজরত হাসান বসরি রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর স্মরণের অর্থ এখানে যাবতীয় আনুগত্য ও ইবাদত।’ (কুরতুবি, ফাতহুল কাদির)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إنَّ أوَّلَ ما يُحاسَبُ به العَبْدُ يَوْمَ القِيامةِ مِن عَمَلِه صَلاتُه، فإن صَلَحَتْ فقدْ أَفلَحَ وأَنجَحَ، وإن فَسَدَتْ فقدْ خابَ وخَسِرَ
কেয়ামতের দিন বান্দার আমলগুলোর মধ্যে সবার আগে নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ ঠিক মতো আদায় হলে সে সাফল্য অর্জন ও মুক্তি লাভ করবে; অন্যথায় সে ব্যর্থতার নৈরাশ্যে নিমজ্জিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (তাবারানি)
জাহান্নামীদের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, বেহেশতের অধিকারীগণ অপরাধীগণকে জিজ্ঞাসা করবে-
مَا سَلَکَکُمۡ فِیۡ سَقَرَ قَالُوۡا لَمۡ نَکُ مِنَ الۡمُصَلِّیۡنَ وَ لَمۡ نَکُ نُطۡعِمُ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ کُنَّا نَخُوۡضُ مَعَ الۡخَآئِضِیۡنَ وَ کُنَّا نُکَذِّبُ بِیَوۡمِ الدِّیۡنِ حَتّٰۤی اَتٰىنَا الۡیَقِیۡنُ فَمَا تَنۡفَعُهُمۡ شَفَاعَۃُ الشّٰفِعِیۡنَ
‘কিসে তোমাদের জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করালো? তারা বলবে, ‘আমরা নামাজ আদায়কারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’। ‘আর আমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করতাম না’। ‘আর আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সঙ্গে (বেহুদা আলাপে) মগ্ন থাকতাম’। ‘আর আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম’। 'অবশেষে আমাদের কাছে মৃত্যু আগমন করে'। অতএব সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকার করবে না।’ (সুরা মুদ্দাসির : আয়াত ৪২-৪৮)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক বিশুদ্ধ হাদিসে বলেছেন-
اَلْعَهْدَ الَّذِىْ بَيْنَنَا وَ بَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
‘আমাদের এবং অমুসলিমদের মধ্যে (পার্থক্য সূচিত করে) নামাজের প্রতিশ্রুতি। যে নামাজ পরিত্যাগ করেছে সে কাফের হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ)
অন্য এক হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন-
بَيْنَ الْعَبْدِ وَ بَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
‘মুমিন বান্দা ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ পরিত্যাগ করা।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ও তিরমিজি)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন-
مَنْ فَأتَتْهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ حَبِطَ عَمَلُهُ
‘যার আসরের নামাজ ছুটে গেছে তার আমল বরবাদ হয়ে গেছে।’ (বুখারি)
নামাজ পরিত্যাগকারীর পরিণাম সম্পর্কে হাদিসের আরও কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
১. যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিলো সে আল্লাহর জিম্মাদারি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো।’ (সুনান)
২. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশিত হয়েছি, যতক্ষণ না তারা মুখে উচ্চারণ করবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত পরিশোধ করবে। এরূপ করলে তারা আমার পক্ষ থেকে জান-মালের নিরাপত্তা পাবে। ঐগুলোর হক নিয়মিত আদায় করতে হবে অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ মতো ঐগুলো আদায় করতে হবে। এর ফলে তাদের হিসাব আল্লাহর জিম্মায় থেকে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৩. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নামাজের হেফাজত করবে, কেয়ামতের দিন এটা তার জন্য আলাকবর্তিকা, পথের দিশারী ও মুক্তির কারণ হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে না, তার জন্য উহা না হবে আলোকবর্তিকা, না হবে পথের দিশারী, না হবে মুক্তির অবলম্বন। কেয়ামতের দিন ফেরাউন, কারুন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সঙ্গে তার উত্থান হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, তাবারানি)
৪. হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ নষ্ট করলো; ইসলামে তার কোনো অংশই রইলো না।’
৫. ইমাম আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করলো; তার ওপর থেকে মহান ও মহিয়ান আল্লাহর জিম্মাদারী খতম হয়ে গেলো।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৬. ইমাম বায়হাকি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামের কোন জিনিসটি আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। তিনি বললেন-
الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا وَ مَنْ تَرَك الصَّلَاةَ فَلَا دِيْنَ لَهُ وَالصَّلَاةُ عَمَادُ الدِّيْن
নামাজ, সেটা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা। যে নামাজ পরিত্যাগ করলো; তার কোনো ধর্ম নেই। আর নামাজ হচ্ছে ধর্মের ভিত্তি।’ (বায়হাকি)
৭. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘বালক (ও বালিকা) যখন ৭ বছরে উপনীত হয় তখন তাকে নামাজের আদেশ দাও এবং যখন সে দশ বছরে উপনীত হয় তখন নামাজ না পড়লে তাকে প্রহার করো।’ (আবু দাউদ)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘সাত বছর বয়সে নিজ নিজ সন্তান-সন্ততিকে নামাজের আদেশ দাও, দশ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে তাদের প্রহার করো এবং পৃথক পৃথক শয্যায় তাদের শয়নের ব্যবস্থা করো।’ (আবু দাউদ)
ইমাম আবু সুলায়মান খাত্তাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বাচ্চা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে নামাজ পরিত্যাগ করলে তার শাস্তির কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।
সামর্থ থাকা সত্ত্বেও জামাতে নামাজ পরিত্যাগ করার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
یَوۡمَ یُکۡشَفُ عَنۡ سَاقٍ وَّ یُدۡعَوۡنَ اِلَی السُّجُوۡدِ فَلَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ خَاشِعَۃً اَبۡصَارُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّۃٌ ؕ وَ قَدۡ کَانُوۡا یُدۡعَوۡنَ اِلَی السُّجُوۡدِ وَ هُمۡ سٰلِمُوۡنَ
‘সে দিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। আর তাদেরকে সেজদা করার জন্য আহবান জানানো হবে, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টিসমূহ অবনত অবস্থায় থাকবে, অপমান তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ তাদের তো নিরাপদ অবস্থায় সেজদা করার জন্য আহবান করা হতো (তখন তো তারা সেজদা করেনি)।’ (সুরা কলম : আয়াত ৪২-৪৩)
কেয়ামতের দিন তাদের অনুশোচনার অপমান জ্বালা ভোগ করতে হবে। অথচ দুনিয়াতে তাদেরকে নামাজের দিকে আহ্বান করা হয়েছিল। হজরত কাব আল আহবার বলেন, আল্লাহর শপথ! এ আয়াতটি জামাত পরিত্যাগকারীদের প্রসঙ্গে নাজিল হয়েছে। সামর্থ থাকা সত্ত্বেও জামাত ছেড়ে দেওয়ার জন্য এর চেয়ে কঠিন ও সুস্পষ্ট হুশিয়ারি সর্তর্কবার্তা আর কী হতে পারে?
৮. জামাত পরিত্যাগকারীদের ব্যাপারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘আমার ইচ্ছে হয় এই নির্দেশ জারি করতে যে, একজন ইমাম হয়ে নামাজ প্রতিষ্ঠা করুক আর আমি লাকড়ি বহনকারী একদল সহচরসহ ওইসব লোকের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেই, যারা নামাজের জামাতে উপস্থিত হয় না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৯. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনলো এবং উহার অনুসরনের পথে অর্থাৎ জামাতে হাজির হওয়ার ব্যাপারে কোনো ওজরই প্রতিবন্ধক হয়ে না দাঁড়াল; তার ঘরে পড়া কোনো নামাজই কবুল হবে না। প্রকৃত ওজর কি এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ভয় কিংবা রোগ।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, ইবনু হিব্বান)
১০. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহর অভিশাপ-
সেই ইমাম; যার ওপর সমাজের লোক নারাজ।
স্বামী নারাজ থাকা অবস্থায় রাত যাপনকারীনী স্ত্রী এবং
যে ব্যক্তি হাইয়্যা আলাস সালাহ এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ শুনেও উহাতে সাড়া দেয় না। অর্থাৎ জামাতে হাজির হয় না।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সত্যিকারের নামাজি হওয়ার তাওফিক দান করুন। নামাজ পরিত্যাগ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। জামাতে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
অর্থসংবাদ/এসএম