অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হতে যাওয়া চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বাড়তে পারে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাজেট ঘাটতিতে রূপ পেতে পারে।
গত জুলাইয়ে কেন্দ্র সরকারের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ঘোষণার পর অর্থনীতি চাঙ্গায় হিমশিম খাওয়া মার্কিন অর্থনীতির জন্য এটা কিছুটা ইতিবাচক উপাত্ত।
গত মাসের ঘাটতির পরিমাণ জুনের ৮৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিশাল ঘাটতির তুলনায় অনেক কম। গত মাসে ঘাটতি হ্রাসের পেছনে ৫৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার কর রাজস্বের ভূমিকা রয়েছে।
স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাদের বেতন সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় গত জুনে যেখানে ৫১ হাজার ১০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে, সেখানে জুলাইয়ে তার পরিমাণ ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এখন পর্যন্ত চলতি বাজেট বর্ষে ঘাটতির পরিমাণ ২ দশমিক ৮১ ট্রিলিয়নে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে চেয়ে ১ শতাংশ বেড়েছে। ঘাটতি বৃদ্ধির পেছনে সরকারের বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচির ভূমিকা রয়েছে।
চলতি বাজেট বর্ষে এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন সরকারের ব্যয় হয়েছে ৫ দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ৩ দশমিক ৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। বেশির ভাগ অর্থই ব্যয় হয়েছে অর্থনীতিতে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব মোকাবেলার ক্ষেত্রে।
মার্কিন কংগ্রেসে এ পর্যন্ত ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের উদ্ধার প্যাকেজ পাস হয়েছে। তবে গত ৩১ জুলাই সপ্তাহে ৬০০ ডলার বেকারত্ব সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আরো সহায়তা প্যাকেজ গ্রহণ নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ চলছে।
গত রোববার সরকারি নির্দেশনা সপ্তাহে ৪০০ ডলার বেকারত্ব সুবিধা চালু রাখার কথা বলেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে রাজ্য সরকার ২৫ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করবে। আগামী পাঁচ সপ্তাহ পর এ তহবিলও ফুরিয়ে গেলে কীভাবে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ নিশ্চিত হবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রণাধীন নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আরেকটি ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিল পাস হয়েছে। কিন্তু রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সিনেটে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি একটি সহায়তা প্যাকেজে সমর্থন দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে প্যাকেজটি পাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছে দ্য কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস। এতে ১১ বছর ধরে চলা মার্কিন অর্থনীতির সম্প্রসারণের ইতি ঘটতে যাচ্ছে।
২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়ে আসছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে ফ্লোরিডাসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে কভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভোক্তাব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা মোট অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ৭০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
গত মাসে সরকারের তরফ থেকে জানা গেছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) রেকর্ড ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে নতুন করে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধিতে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ফের বন্ধ হয়ে পড়ায় অর্থনীতিতে এ প্রভাব পড়েছে। এ নিয়ে টানা ২০ সপ্তাহে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বেকারত্ব সুবিধার জন্য আবেদন করেছে। গত মাসে বেকারত্ব হার কিছুটা কমে ১০ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ালেও তা ২০০৮-০৯-এর আর্থিক সংকটের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।