এমন পরিস্থির দায় দেয়া হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, তা রোধে নেয়া নানা বিধিনিষেধ এবং আবাসন খাতে ইতিহাসে সর্বাধিক মন্দা পরিস্থিতিকে। একই সময়ে নীতিনির্ধারকদের ওপর বেড়েছে চলতি বছর নতুন প্রণোদনা ঘোষণার চাপ।
যদিও প্রান্তিকভিত্তিক প্রবৃদ্ধি ও খুচরা বিক্রির মতো ডিসেম্বরের নির্দেশক বাজারের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনজুড়ে বিরাজমান অর্থনৈতিক প্রবণতা এখনো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। সব মিলিয়ে কভিডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রত্যাহার করে নেয়ায় চীনও চাপের মধ্যে রয়েছে।
এক বছর আগের সময়ের চেয়ে চীনে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (এনবিএস) তথ্য বলছে, এ হার তৃতীয় প্রান্তিকের চেয়ে কম। সে সময় প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
এনবিএসের পরিচালক ক্যাং ই বলেন, ২০২২ সালে চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কিছু অপ্রত্যাশিত ঝুঁকির মুখে পড়েছিল, যার মধ্যে ছিল কভিড সংক্রমণ ও দাবদাহ। চাহিদায় তিন গুণ সংকোচন, সরবরাহ সংকট বেড়ে যাওয়ায় জটিলতা ও অনিশ্চয়তাও বাড়ছে।
চলতি বছর অনেকটা হঠাৎ করেই সংক্রমণসংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে চীন, যা অর্থনীতির গতি বৃদ্ধির প্রত্যাশা তৈরি করেছে। কিন্তু বিধিনিষেধ তুলে নেয়ায় দেশটিতে আবারো বেড়েছে সংক্রমণ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অব্যাহত সংক্রমণ প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
মুডি’স অ্যানালিটিকসের অর্থনীতিবিদ হ্যারি মরফি বলেন, ২০২৩ সাল চীনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। দেশটিকে কভিড-১৯ রোগের পাশাপাশি আবাসন খাতের দুরবস্থা এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় রফতানিতে দুর্বলতা; সবকিছুর সঙ্গেই মোকাবেলা করতে হবে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ লুইস লু বলেন, ডিসেম্বরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে খুচরা খাতে ব্যয়ের মতো কিছু বিষয় এখনো দুর্বল। যে সুদূরপ্রসারী ভাবনা থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে তা কাজে লাগছে বলেই তথ্যপ্রমাণে উঠে আসছে।
এ অবস্থায় ২০২৩ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এরই মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে চীন। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে প্রবৃদ্ধি শুরু হবে।
চীনের অর্থনীতির শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন বৈশ্বিক মন্দাকে প্রশমিত করতে পারে। তবে এটি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণও হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চীনে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর সংক্রমণ রোধে কড়াকড়ি আরোপ করে দেশটির সরকার। টানা কঠোর বিধিনিষেধ সংক্রমণ প্রশমন করলেও দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এক পর্যায়ে জনঅসন্তোষ বাড়তে থাকে, দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা সরকারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরেই জিরো কভিড নীতি প্রত্যাহার করে চীন। এ প্রত্যাহার অনেকের জন্য স্বস্তি বয়ে আনলেও সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখতে হচ্ছে দোকান বা রেস্তোরাঁ, যা অর্থনীতির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
অর্থসংবাদ/এসএম