ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি কমেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা

ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি কমেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা
ব্যাপকভাবে খেলাপি ঋণ কমায় প্রভিশনিং ঘাটতি কমে এসেছে। গত বছরে তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি ২ হাজার ৫২০ টাকা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে মোট প্রভিশন ঘাটতি নেমে আসে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকায়। গত সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ডিসেম্বর শেষে সরকারি চার ব্যাংক, বেসরকারি তিন এবং বিশেষায়ীত এক ব্যাংকের সামষ্টিক প্রভিশন ঘাটতির অঙ্ক ১৯ হাজার ৪৬ কোটি ছাড়িয়েছে। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল হক বলেন, "সাধারণত খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো প্রভিশনিং করতে হয়। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যপক খেলাপি ঋণ কমেছে যার কারণে প্রভিশনিং ঘাটতি কমে এসেছে।"

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটে রয়েছে যার কারণে গ্রাহকের থেকে ঋণের টাকা আদায়ে খুবই সক্রিয় ছিল। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে নীতিমালা সহজ করেছে যার কারণেও খেলাপি ঋণ কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১৩ হাজার ৭৪০ টাকা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১.৩৪ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছানোর পর ডিসেম্বরে মোট খেলাপি ঋণ ১.২০ লাখ কোটি টাকায় নেমে আসে।

প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে সরকারি বেসিক ব্যাংকের। ডিসেম্বরে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর পরেই রয়েছে সরকারি অগ্রণী ব্যাংকের ৪ হাজার ৪২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

এই ডিসেম্বর প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৮৫৩ কোটি টাকা। যদিও গত সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৯৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত কোন ঋণ সাবস্ট্যান্ডার্ড মানে খেলাপি হলে পুরো ঋণটা খেলাপি দেখানো হয়। তবে এই ঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশন রাখতে হলে সর্বোচ্চ ২০% প্রভিশনিং করতে হয়। তাই যে পরিমাণে খেলাপি ঋণ কমেছে একই পরিমাণে প্রভিশন ঘাটতি কমার কথা নয়।

এছাড়া প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা বেসরকারি ৪টি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি ৬ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৯ কোটি টাকা।

এছাড়া বিশেষায়ীত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এর প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, "প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা থাকে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় আমানত।"

"ব্যাংক খাতে সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত। ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে এর আগেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ