বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় আমানত এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ, উভয়ই বেড়েছে; আমানত বেড়েছে ২৪ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স ৩৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রসারের ফলে গ্রামীণ পর্যায়ে অনেক লোক, যারা আগে ব্যাংকিং পরিষেবা ব্যবহার করতে পারতেন না, তারাও এখন সহজেই এই পরিষেবার নাগাল পাচ্ছেন। মূলত এ কারণেই এ ধরনের ঋণ বিতরণ বেড়েছে।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, "এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক সেবা সহজ হয়ে উঠেছে, তাই এর জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। গেল বছরে ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে, কারণ এই বিভাগে ছোট ছোট কনজ্যুমার বা গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া হয়।"
তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং ঋণ সাধারণত ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য দেওয়া হয় এবং এখানে ঋণ পরিশোধের হারও খুব ভালো। এছাড়া, গত বছর মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষদের নিজেদের খরচ মেটাতে ঋণ নিতে হয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হুসেন বলেন, "এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ব্র্যাক ব্যাংক ঋণ বিতরণ অনেকাংশে বাড়িয়েছে। ২০২২ সালজুড়ে যে ঋণ বিতরণ হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে, তার প্রায় সিংহভাগই ব্রাক ব্যাংক করেছে।"
তিনি জানান, ২০১৯ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করে ব্র্যাক ব্যাংক। বর্তমানে এসএমই ঋণ বিতরণ ধীরে ধীরে নতুন এই প্ল্যাটফর্মে চলে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০,১৫৭ কোটি টাকা, যা এক বছর আগেও ছিল ২৪,২৯৪ কোটি টাকা।
এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটগুলোর মাধ্যমে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানত ২৪ শতাংশ বেড়ে ৫,৮৬৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। তবে একই সময়ে ঋণ বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৯২ শতাংশের বেশি।
আমানতের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার বিষয়ে এমরানুল হক বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার অস্থিতিশীল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গিয়ে প্রচুর টাকা বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে, এছাড়া মূল্যস্ফীতি জনগণের সঞ্চয় খেয়ে ফেলায় আমানতের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পরিমাণ এখনও আমানতের পরিমাণের তুলনায় উল্লেখযোগ্য নয়; লোন-টু-ডিপোজিট বা ঋণ-আমানত অনুপাত এখন ৩৪ দশমিক ১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো, বেশিরভাগ ব্যাংক এখনও এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ এবং পুনরুদ্ধারের জন্য সম্ভাব্য পরিকাঠামো তৈরি করতে পারেনি।
যদিও ব্যাংকগুলো তাদের মোট জমার মধ্যে ১০০ টাকায় ৮৭ টাকা ঋণ বিতরণ করতে পারে এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো ঋণ হিসেবে বিতরণ করতে পারে ৯২ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণের অনুপাত এখনো অনেক কম।
২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। লক্ষ্য ছিল, সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় সহজে ব্যাংকিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। বিশেষ করে, যারা ভৌগোলিকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করেন এবং আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের নাগালের বাইরে থাকেন, তাদেরকে এই পরিষেবার আওতায় নিয়ে আসাই এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর মূল উদ্দেশ্য।
অর্থসংবাদ/এসএম