বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে লেখা বার্ষিক চিঠিতে এ পরামর্শ দেন বাফেট। বিশ্বে বিনিয়োগ গুরু হিসেবে খ্যাত ৯২ বছর বয়সী ওরায়েন বাফেট বিনিয়োগকারীদের লেখা চিঠিতে অর্থনীতির এ টালমাটাল সময়েও মার্কিন অর্থনীতির ওপর তাঁর আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রতিবছর একবার বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে চিঠি লেখেন বাফেট। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের জন্য লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, অর্থনীতিতে উত্থান-পতন থাকবেই। ধৈর্য ধরে এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের তিনি পরামর্শ দেন, মূল্যস্ফীতির দিকে নজর না দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি নানা সম্ভাবনায় নজর দিন।
মার্কিন নাগরিকদের আত্মসমালোচনা বা আত্মসন্দেহগ্রস্ত না হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন ওয়ারেন বাফেট। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ৫৮ বছর ধরে বার্কশায়ার হাথাওয়ে পরিচালনা করছেন। এই সময়ে মার্কিন অর্থনীতির নানা বৈচিত্র্য তাঁকে নানাভাবে পরিপুষ্ট করেছে। তিনি কোম্পানির দায়িত্ব ছাড়ার পরও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাফেট মনে করেন, দক্ষ বাজারব্যবস্থা কেবল পাঠ্যবইয়েই থাকে। বাস্তবে বাজারের আচরণে অনেক সময় হতবুদ্ধি হয়ে যেতে হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায় না, কী হচ্ছে; কয়েক বছর পেরোলে বোঝা যায়, কী ঘটেছে।
তবে বাজারব্যবস্থার জন্য আস্থা ও নিয়মকানুন জরুরি। বড় ব্যবসা পরিচালনার জন্য এর বিকল্প নেই। এমনকি পরিস্থিতি হতাশাজনক হলেও নিয়মকানুন থাকা প্রয়োজন। তাই বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাফেটের আহ্বান, তাৎক্ষণিক প্রাপ্তির চিন্তা না করে দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করা উচিত।
মার্কিন অর্থনীতি সম্পর্কে বাফেট লিখেছেন, মার্কিন অর্থনীতির যে গতি, তাতে তাঁর আস্থা আছে। কখনো কখনো অর্থনীতির হাওয়া বন্ধ হয়েছে ঠিক, কিন্তু তা আবার ফিরে এসেছে। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা খারাপ হবে—এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই। তিনি নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, তাঁর এ ভাবনা সত্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও একই ধারা দেখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চিঠিতে বার্কশায়ার হাথাওয়ের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যও তুলে ধরা হয়। আর্থিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছর বার্কশায়ার হাথাওয়ে ৩ হাজার ৮০ কোটি ডলার পরিচালন মুনাফা করেছে। বছর শেষে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার। তবে অ্যাপল ইনকরপোরেশনের শেয়ারের বাজারমূল্য কমে যাওয়ার প্রভাবেও লোকসান বেড়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামগ্রিক বিবেচনায় ২০২২ সাল বাফেটের জন্য ভালো সময়ই ছিল বলা চলে। কারণ, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও নীতি সুদহার বৃদ্ধি বা সরবরাহব্যবস্থার সংকটের সমস্যা মোকাবিলা করে তিনি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন।