সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে দেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা কমছে নারী বিনিয়োগকারী।
সিডিবিএলের তথ্য মতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে পুঁজিবাজারে সর্বমোট বিও হিসাব ছিল ২৭ লাখ ১০ হাজার ৫৮৬টি। এর মধ্যে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২১ হাজার ৬০৬টি। অর্থাৎ ওই বছর দেশে মোট বিও হিসাবের ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশই ছিল নারী বিনিয়োগকারীদের। পাঁচ বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের চিত্র পাল্টেছে। ২০২২ সাল শেষে মোট ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৪টি বিও হিসাবের বিপরীতে নারীদের বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৪টি বা ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
জানা গেছে, গত চার বছর ধরে টানা নারী বিনিয়োগকারী কমছে দেশের শেয়ারবাজারে। ২০১৯ সালে নারীদের বিও হিসাব ছিল মোট বিনিয়োগকারীদের ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০২০ সালে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ০১ শতাংশে। আর ২০২১ সালে ২৫ দশমিক ১২ শতাংশে এবং ২০২২ সাল শেষে নারী বিও হিসাবের সংখ্যা নেমে আসে ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশে। বর্তমানে তা আরও কমে ২৪ দশমিক ৬৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
২০২২ সালের জনশুমারি প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সর্বমোট নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, যা পুরুষের তুলনায় বেশি। বিপরীতে দেশের শেয়ারবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী কর্মীদের সংখ্যা কত তাঁর সঠিক কোন তথ্য নেই। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং দুই স্টক এক্সচেঞ্জে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছে অর্থসংবাদ।
জানা গেছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় প্রথমবারের মতো নারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা ইসলাম। গত বছরের ৮ মে তাঁকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে একজন কমিশনারসহ মোট ৩৭ জন নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। বিএসইসির মুখপাত্রের দাবি এই সংখ্যা শতাংশ হিসেবে ৩০ শতাংশের বেশি।
অপরদিকে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৬৭ জন। এর মধ্যে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে একজন নারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সম্প্রতি ওরাকল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রুবাবা দৌলাকে ডিএসইর পরিচালক পদে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট কর্মীর মধ্যে ৫০ জন বা ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ নারী রয়েছেন। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৭৭ জন কর্মীর মধ্যে নারী রয়েছেন ১৩ জন বা ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএসইসি।
তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে পুঁজিবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পুঁজিবাজারে প্রায় ৮ কোটি নারী বিনিয়োগকারী রয়েছে। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী। তবে সেই তুলনায় দেশের পুঁজিবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম। পুঁজিবাজারে যেন নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ে সেজন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা গৃহিনী, নারী শিক্ষার্থী এবং নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছি।
বিএসইসি মুখপাত্র বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারী গৃহীনি। এজন্য নারীরা যেন ঘরে বসে সহজেই বিনিয়োগ করতে পারেন সেজন্য কমিশন আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
পুঁজিবাজারে নারীদের কাজের সুযোগ সম্পর্কে রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে কমিশন। বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই এবং সিডিবিএলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সরকার নির্ধারিত কোটা রয়েছে। এছাড়াও পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন নারী উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ থাকে সেজন্য কমিশন সবসময় সংশ্লিষ্ট সবাইকে উৎসাহিত করে।
অর্থসংবাদ/ওয়ালিদ