বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, বিশ্বে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা শুরু হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সোনায় অর্থ ঢালছেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে গত শুক্রবার এক দিনে সোনার দাম প্রায় ৬৯ ডলার বেড়ে প্রতি আউন্স হয় এক হাজার ৯৮৮ ডলার। অর্থাৎ দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি। এক দিনে সোনার দাম বেড়েছে ৩.৫৯ শতাংশ এবং এক সপ্তাহে বেড়েছে ৬.৪৪ শতাংশ। দুই দিনের ছুটি কাটিয়ে সোমবার বাজার খুললে মূল্যবান ধাতুর দাম আরো বাড়তে পারে।
সোনার পাশাপাশি বাড়ছে রুপার দামও। গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে রুপার দাম ৪.১১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স হয় ২২.৬০ ডলার। এক সপ্তাহে বেড়েছে ১০.২০ শতাংশ।
সংস্থা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু হওয়া এ সংকটে বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বৃদ্ধির পথ থেকে ফিরে আসবেন বড় ধরণের মন্দা এড়াতে। সে কারণে বাড়ছে সোনার দাম।
এরই মধ্যে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) নীতি সুদহার ৫০ বিপিএস বাড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন, যা এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর কথা থাকলেও তা থেকে পিছু হটতে পারে ফেড।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী তাই ওয়াংগ বলেন, ‘ব্যাংক খাতের আরো অনেক মন্দ খবর আসতে পারে, এমন উদ্বেগ থেকে সোনার দাম বাড়ছে। এমনকি বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ফেডের পরবর্তী বৈঠকে সুদহার বাড়ানো হবে না।’
এফএক্সটিএমের সিনিয়র গবেষক লুকম্যান ওটুনুগা বলেন, ‘ব্যাংক খাতের অস্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীরা ঢাল হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ করছেন।’ তাঁর মতে, ডলার ও শেয়ারবাজার নিম্নমুখী রয়েছে। ফলে মূল্যবান ধাতু আরো আকর্ষণীয় বিনিয়োগ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় সবাই নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ বাড়ায়।
গত ১০ মার্চ মূলধনসংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) বন্ধ করে দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ করে দিতে হয় সিগনেচার ব্যাংকও। এ অবস্থায় আতঙ্কের পারদ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে আসে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ক্রেডিট সুইসে। যদিও সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫৩.৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তায় আপাতত দেউলিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল ক্রেডিট সুইসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল হিসেবে বিনিয়োগকারীদের কাছে সোনার মূল্য অনেক, বিশেষ করে অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে। এর আগে বৈশ্বিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের নির্বাহী পরিচালক ওয়েনে গর্ডন বলেছিলেন, ‘২০২৩ সালেই সোনার দাম প্রতি আউন্স দুই হাজার ডলার অতিক্রম করবে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর সুদের হার বৃদ্ধির কারণে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হলেও এখন আবার দুর্বল হচ্ছে। এ অবস্থায় ডলারের বিপরীতে নিরাপদ ঢাল হতে পারে সোনা।’
এদিকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। সবচেয়ে ভালো মানের সোনার (২২ ক্যারেট) দাম ভরিতে সাত হাজার ৬৯৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা।
অর্থসংবাদ/এসএম