পাশাপাশি আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কিনা এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কিনা- তা জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে সেই সংক্রান্ত তথ্যও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ের তথ্য এবং এ সংক্রান্ত আইন, নথি ও সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওই দিন পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আজ শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়। আমরা সেটাই করব। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে মৃত্যুর কারণ কী। কাউকে র্যাব তুলে নিতে পারে কিনা।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওই নারীকে আটক করে আদালতে হাজির করার সময়টা ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। উনি (আবেদনকারী আইনজীবী) সঠিকভাবে সাবমিশন দেননি। হোমওয়ার্ক করেননি। যেকোনো বিষয় নিয়ে যখন তখন কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া যায় না। আমার ফ্রেন্ড ভুল ইনফরমেশন তুলে ধরেছেন।
আদালত র্যাব তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তখন অ্যাটর্নি জেনারেল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পড়ে শোনান। আদালত বলেন, তাকে উঠিয়ে নেওয়ার সময় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। র্যাব কর্তৃক উঠিয়ে নেওয়া হয়। আদালত বলেন, কেউ যেন ভিকটিম না হয়। আর যেন সবাই ন্যায়বিচার পায়।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
এদিকে মঙ্গলবার নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল থেকে সুলতানা জেসমিনের সুরতহাল প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী সুলতানা জেসমিন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে নির্যাতন করা হয়নি।
র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় সকালে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। জনস্বার্থে দায়ের করা রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, র্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
গত সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় ‘পোস্টমর্টেম রিপোর্ট’ তলব করেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সকালের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এ রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সুলতানা জেসমিন র্যাবের যে কর্মকর্তার অধীনে ছিলেন তার নাম আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি আদালত আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিককে রিট আবেদন করতে বলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী মনোজ কুমার মঙ্গলবার রিট আবেদন করেন।
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী র্যাব হেফাজতে নওগাঁর ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্তের নির্দেশনা চান। সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় মামলা না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে পদক্ষেপ চান। জবাবে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী ওই নারীকে আটকের পর অসুস্থ হলে হাসপাতালে তিনি মারা যান। এক্ষেত্রে আগামী বুধবার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হবে।
প্রসঙ্গত, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়- নওগাঁয় র্যাবের হেফাজতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা সুলতানা জেসমিন নামে ওই নারীকে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনেরা।
গত শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। গত বুধবার (২২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে ওই নারীকে আটক করে র্যাব। সুলতানা জেসমিন সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। শহরের জনকল্যাণ মহল্লায় ভাড়া থাকতেন তিনি।