মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকিং আমানত ও ঋণের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে প্রতি তিন মাস পর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এবার গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০২০ সাল থেকে করোনার কারণে মন্দা শুরু হয়। করোনার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে দেখা দেয় বৈশ্বিক মন্দা, যা এখনো চলমান। এসব মন্দায় বিশেষ করে গ্রামে কর্মসংস্থান সংকোচিত হয়ে পড়েছে। মানুষের আয় কমে গেছে। একই সঙ্গে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। যে কারণে মানুষ এখন আয় দিয়ে সংসারের ব্যয়নির্বাহের পর সঞ্চয় করতে পারছেন না। এছাড়া পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রামে পণ্য ও সেবার মূল্য বেশি। এসব কারণে সার্বিকভাবে গ্রামে আমানত বৃদ্ধির হারও শহরের চেয়ে বেশি কমেছে। কোনো কোনো ত্রৈমাসিকে গ্রামে এ হার নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থাৎ আমানত তো বাড়েইনি, উলটো আরও আগের চেয়ে কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে সার্বিকভাবে আমানত বেড়েছিল ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানত বাড়ার হার কমেছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে শহরে আমানত বেড়েছিল ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বেড়েছে ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানত বাড়ার হার কমেছে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ।
২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে গ্রামে আমানত বেড়েছিল ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে গ্রামের ব্যাংকের শাখাগুলোয় আমানত বাড়েনি। উলটো আগের আমানত থেকে কমেছে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকেও গ্রামে আমানত প্রবাহ নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। গত এপ্রিল-জুন ও জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাড়লেও অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তা নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে কমে গেছে।
সূত্র জানায়, মোট আমানতের মধ্যে শহরের অবদানই বেশি, গ্রামের কম। মোট আমানতে গ্রামের অবদান কমেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মোট আমানতের ২১ দশমিক ৫১ শতাংশ ছিল গ্রামের। গত ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশে।
একই সময়ে বেড়েছে শহরের অবদান। মোট আমানতের শহরের অবদান ৭৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকে আমানত বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকে কমেছে দশমিক ৮০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকে বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোয় কমেছে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর আগে সব সময়ই ইসলামি ব্যাংকগুলোয় আমানত বাড়ত।
তবে ঋণের চাহিদা শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কম সুদে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর কারণে গ্রামে এর চাহিদা বেশি। ফলে বিতরণও বেশি হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে ঋণ শহরে বেশি। মোট ঋণের ৮৮ শতাংশের বেশি শহরে এবং গ্রামে ১২ শতাংশের কম।