ইসলামী ব্যাংক একের পর এক নতুন সাফল্য নিয়ে আমানত, বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স আহরণ, শিল্পায়ন, এসএমই বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, পল্লী উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য সাফল্যের মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অংশীদার ইসলামী ব্যাংক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অন্যতম বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান।
দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত ও বিনিয়োগের প্রায় ১০ শতাংশ, বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় অংশ এককভাবে এ ব্যাংক পরিচালনা করছে। বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রায় ২২ শতাংশ এ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসে। এ ব্যাংকের হাত ধরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, গড়ে উঠেছে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। দেশের ৬ হাজারের বেশি শিল্প কারখানা ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে, কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৮৫ লক্ষ মানুষের। বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম দুই স্তম্ভ তৈরি পোশাক শিল্প ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ইসলামী ব্যাংকের হাত ধরেই গড়ে উঠেছে।
বিগত ৪০ বছরে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণের জন্য ইসলামী ব্যাংক সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও সিঙ্গাপুরে ৩১ জন প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজ করছে। বিশ্বের ৫৯৪ টি ব্যাংকের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ১৫৫ প্রতিষ্ঠানের সাথে ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স অ্যারেঞ্জমেন্ট রয়েছে।
প্রবাসীদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আগে টাকা পাঠানোর সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত উপায় না পেয়ে প্রবাসীগণ অবৈধ উপায় গ্রহণ করতো। ইসলামী ব্যাংক নিয়মিত বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করে। যার সুফল ভোগ করছে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে আসছে নিরাপদে। বিনিয়োগ হচ্ছে জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাতে।
ধর্ম-বর্ণ, শ্রেনী-পেশা নির্বিশেষে সব মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের অনন্য প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এই ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষে। গ্রাহকদের অবিচল আস্থা, ভালোবাসা ও সহযোগিতার ফলেই ইসলামী ব্যাংক আজকের এই অবস্থানে।
ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমে অধিক সংখ্যক মানুষের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। সবুজ ও পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োয় কার্যক্রমকে এ ব্যাংক অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। মানুষের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন পণ্যে ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ প্রদান করে না। বিলাসদ্রব্যের চেয়ে এ ব্যাংক মৌলিক প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিনিয়োগ পরিচালনা করে। সর্বসাধারণের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করেই ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ করে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক ১৯৯৫ সালে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) চালু করে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় গঠন, বিভিন্ন আয়-উৎসারী কর্মকান্ডে বিনিয়োগ কার্যক্রম রয়েছে। শহর এলাকার বস্তিবাসীসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২০১২ সাল থেকে “নগর দরিদ্র উন্নয়ন প্রকল্প” কাজ করছে। ৩১ হাজার গ্রামে বিস্তৃত এ প্রকল্পের সদস্য ১৬ লক্ষ। যার ৯৪ শতাংশই নারী।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দেশের মোট স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের ২১% এখন ইসলামী ব্যাংকের। হজ সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, ক্যাশ ওয়াক্ফ অ্যাকাউন্ট, কারখানা শ্রমিক হিসাবসহ নানা সঞ্চয় হিসাবের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনেছে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে ৩৯৪টি শাখা, ২২৯টি উপশাখা, ২৭০০টি এজেন্ট আউটলেট, ২৫০০টি এটিএম/সিআরএম বুথের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে।
ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম নিজস্ব সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত। ব্যাংকের কোর ই-আইবিএস সফটওয়্যার এই ব্যাংকের তরুণ প্রকৌশলীদের দ্বারা নির্মিত। ইসলামী ব্যাংক তার গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বিকল্প ব্যাংকিং চ্যানেল, ই-কমার্স ইত্যাদি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা বাড়াচ্ছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকগণ সকল লেনদেন করতে পারেন সহজেই।
ইসলামী ব্যাংকিং মূলত একটি সামাজিক দায়বদ্ধ উদ্যোগ। গরিব, দুস্থ, অসহায় মানুষের কল্যাণে ১৯৮৪ সালে ‘‘সাদাকাহ ফান্ড’’ গঠিত হয়। পরে ব্যাপকভিত্তিক কাজের জন্য ‘‘ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন’’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার অধীনে ১৯ টি হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সিং ইনস্টিটিউট সহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন অগনিত মানুষ। সকল মানুষের কাছেই পৌছে যাচ্ছে ইসলাম ব্যাংকের কল্যাণমুখী সেবা।
ইসলামী ব্যাংকের সফলতার অন্যতম নিয়ামক হলো এ ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা। ইসলামী ব্যাংকের দক্ষ পরিচালনা পরিষদ ও নিবেদিত জনশক্তির পাশাপাশি গ্রাহকদের অকুন্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন, সকল রেগুলেটরি অথরিটির পরামর্শ ও সহায়তায় ইসলামী ব্যাংক সফলতার শীর্ষে আরোহন করতে সক্ষম হয়েছে।
এ ব্যাংকের যাত্রার শুরুতে অনেক অনিশ্চয়তা, অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকালে একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন ‘ইসলামী ব্যাংক তাত্ত্বিক যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে, এখন পরিচালনগত যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।’ বিগত ৪০ বছরের পথচলায় নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ ব্যাংক সামনে এগিয়ে চলেছে। ইসলামী ব্যাংকিং এখন সফল বাস্তবতা। ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা এ ব্যাংককে নিজেদের সন্তানের মতই ভালবাসেন। তারা ইসলামী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। অনেক গ্রাহকের কাছে ইসলামী ব্যাংকিং অক্সিজেনের প্রবাহের মতই অনুভূত হয়।
ইসলামী ব্যাংকের অনুসরণে মোট ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরীআহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৪ টি ব্যাংক ২ হাজারের অধিক ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি ইসলামী ব্যাংকের সফলতারই অংশ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে এখনো কিছু ভুল ধারণা ও বিরূপ প্রচার প্রচারণা রয়েছে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক নিয়ে যেসব বিরূপ প্রচারণা চোখে পড়েছে তার উত্তরে ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে মিডিয়ায় বলা হয়েছে ব্যাংকের সকল কার্যক্রম সঠিক নিয়মে চলছে।
ইসলামী ব্যাংকের আমানত-বিনিয়োগ-বৈদেশিক বাণিজ্য-রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স কার্যক্রম সহ সকল কার্যক্রমে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। সূর্যেরআলো, চাদের কিরণ, বাতাস ও পানি যেমন সকল মানুষের জন্য ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমূখী সেবাও ঠিক তেমনি সকল মানুষের জন্য। তাই ইসলামী ব্যাংক তার অনবদ্য সেবার মাধ্যমে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। সকল মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণধর্মী কার্যক্রমের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরো মজবুত করতে ইসলামী ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রাকে বেগবান করার দায়িত্ব এখন সরকারসহ দেশের প্রতিটি নাগরিকের। ২ কোটি গ্রাহকের আস্থার এই ব্যাংক তার গতিতে এগিয়ে যাবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক: রিয়াজ উদ্দিন, ব্যাংকার