হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক বাসসকে এ তথ্য জানায়।
ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল আলম বাসসকে বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত যাঁরা ফেরত এসেছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৮ হাজার ৪০৬ জন পুরুষ এবং ৬ হাজার ৬৫৬ জন নারী রয়েছেন।
ফখরুল জানান, বিদেশফেরত কর্মীদের মধ্যে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে কাজ না থাকা, কাজের বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, আকামা বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এসব প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে আবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাস নিয়েও দেশে ফেরত এসেছেন।
ফেরত আসা কর্মীদের অনেকে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সংশ্লিষ্ট দেশে ফিরে যেতে পারবেন বলে সূত্র জানায়।
বিদেশফেরত এসব কর্মীর পুনর্বাসন প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বাসসকে বলেন, বিদেশফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনে সরকার ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন এবং তাদের পুনঃ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কোভিড-১৯–এ ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত কর্মীদের ৪ শতাংশ সরল সুদে বিনিয়োগ ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশফেরত কর্মীদের সার্বিক কল্যাণে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী জানান, বিপদগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জরুরি খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান; কোভিড-১৯–এ মৃত প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশির পরিবারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান; করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিদেশফেরত কর্মীদের কোয়ারেন্টিন পালন শেষে নগদ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা; বিদেশফেরত অভিজ্ঞ কর্মীদের যথাযথ স্বীকৃতি ও সনদায়নের উদ্যোগ; বিদেশফেরত অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত, দরিদ্র কর্মী ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীর পরিবারের সদস্যদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীসহ দেশে চলমান সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কোন দেশ থেকে কতজন ফিরলেন
দেশে ফেরা কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ২৯ হাজার ৭১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ২৮ হাজার ২২৯ ও নারী কর্মী ১ হাজার ৪৮৫ জন।
সৌদি আরব থেকে ২০ হাজার ৮২৯ জন ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৪৮৪ ও নারী কর্মী ২ হাজার ৩৪৫ জন। সৌদিফেরত কর্মীদের মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
করোনার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ না থাকায় ট্যুরিস্ট–নির্ভর দেশ মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন ৮ হাজার ৪৯৭ জন প্রবাসী কর্মী।
কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেছেন ১ হাজার ৬০৪ জন। বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে ওমান থেকে দেশে ফিরেছেন ৫ হাজার ৭১৩ জন। ভিসার মেয়াদ না থাকায় কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন ৭ হাজার ৯৪১ জন এবং বাহরাইন থেকে ফিরেছেন ৭৪৬ জন।
কাজ না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৭১, কাতার থেকে ৭ হাজার ৭৬৯ এবং মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন ২ হাজার ৯৭৯ জন প্রবাসী। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরেছেন ১০০ জন। কাজ না থাকায় থাইল্যান্ড থেকে ২০, মিয়ানমার থেকে ৩৯, জর্ডান থেকে ১ হাজার ৭৬ এবং ইরাক থেকে ফিরেছেন ২ হাজার ১৩৬ জন। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে ফিরেছেন ১২২ এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ১৩৫ জন।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ইতালি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৫১ প্রবাসী বাংলাদেশিকে। এই ১৫১ জন প্রবাসী গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে ইতালি গেলে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়। পরে দেশে ফিরলে সবাইকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।
এ ছাড়া লেবানন থেকে ১ হাজার ৭৮২, রাশিয়া থেকে ১০০, মরিশাস থেকে ২০, তুরস্ক থেকে ২ হাজার ৮০৩, নেপাল থেকে ৫৫, হংকং থেকে ১৬, কম্বোডিয়া থেকে ৪০ এবং জাপান থেকে ৮ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।