প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ মার্চ লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারদর ছিল ৪২ টাকা ৩০ পয়সা। রোববার (২ এপ্রিল) কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় ৮১ টাকা ৭০ পয়সায়। মাত্র ৯ কার্যদিবসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩৯ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে অনেক ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। অথচ দুর্বল মৌলভিত্তির লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
জানা গেছে, সমাপ্ত হিসাববছরে (২০২২) চামড়া খাতের কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ব্যবসায় লোকসান দিয়েছে। ওই বছর শেয়ারপ্রতি ৮৬ পয়সা করে লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। এ হিসেবে এক বছরে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮২ টাকায়। মুনাফা না করতে পারায় গত বছর বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশও দেয়নি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার।
এদিকে চলতি হিসাববছরের দুই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চামড়া খাতের কোম্পানিটি। প্রকাশিত দুই প্রান্তিকেও কোম্পানিটি মুনাফায় ফিরতে পারেনি। চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই’২২-সেপ্টেম্বর’২২) কোম্পানিটি য়োরপ্রতি ৬২ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর’২২-ডিসেম্বর’২২) লোকসান হয়েছে শেয়ারপ্রতি ১৭ পয়সা করে। আর দুই প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭৯ পয়সা।
২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর মাত্র তিন বার বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে নগদ ৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১৫ শতাংশ করে বোনাস লভ্যাংশও দেওয়া হয়। ২০২০ সালে কোনও লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র ১ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়। আর সর্বশেষ হিসাববছরে (২০২২) সালে কোন লভ্যাংশই দেয়নি কোম্পানিটি।
ডিএসইর তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের সম্পদমূল্যও কমেছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) ছিল ১৭ টাকা ৫৭ পয়সা। চার বছর পর কোম্পানিটির এনএভি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২২ সাল শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৮৩ পয়সায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের কাছে একাধিকবার অস্বাভাবিকভাবে কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়। তবে লিগ্যাসি জানিয়েছে অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই। অর্থাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে কোন যৌক্তিক কারণ নেই।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, শুধু লিগ্যাসি ফুটওয়্যার নয়, বাজারে বেশকিছু শেয়ারের দর যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ওঠানামা করছে। এসব শেয়ারে যারা বিনিয়োগ করছেন হয়তো তাদের কাছে কোন তথ্য আছে, এজন্য তাঁরা কিনছেন।
তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া যদি কোন কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকে, তবে সেটি ডিএসইর খতিয়ে দেখা উচিৎ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, কারসাজির যেসব উপাদান রয়েছে সেগুলো কমিশন নজরদারিতে রেখেছে। কারসাজির প্রমাণ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারসহ দুই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় ২০১৯ সালে চার ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মোট ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক। এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করায় কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে সতর্কও করে বিএসইসি। ব্রোকারেজ ফার্মটির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) সাইফুল ইসলাম এসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ইন্ধনদাতা বলে অভিযোগ ওঠে।