তিনি বলেন, আমাদের নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এবং নতুন দেশ (জনশক্তি পাঠানোর জন্য) খুঁজে বের করতে হবে। আমরা এমন ধরনের প্রশিক্ষণের (কর্মীদের জন্য) ব্যবস্থা করব, যা একটি দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী রোববার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি নতুন দেশে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে এবং সেজন্য আমরা কর্মীদের জন্য বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও বলেন, যদি আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরা কিভাবে ভালো থাকবেন এবং বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবেন সে বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা (প্রবাসী) যদি হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, তবে তা হয়তো আপনাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছায় এবং তারা তা ব্যয় করে কিন্তু এতে যিনি এই অর্থ পাঠাচ্ছেন তার কোনো সঞ্চয় হয় না।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরার পর দেখেন যে দেশে তার কোনো টাকা নেই এবং অনেককে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, যারা ব্যাংকিং বা আইনি মাধ্যমে টাকা পাঠায়, তার সরকার তাদের সেই রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রণোদনা দিচ্ছে।
তার সরকার কর্তৃক প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর নির্দেশ দেন, যাতে প্রবাসীরা তাদের আবাস স্থলে থেকে সহজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে।
সরকার প্রধান বলেন, হুন্ডি ব্যবহার করে টাকা পাঠানো হলে, তা অন্যের হাতে চলে যাবে; কিন্তু ব্যাংকে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফেরার পর তাদের সঞ্চয়কৃত অর্থসহ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বিদেশে কাজে গিয়ে মানুষ যাতে প্রতারণার শিকার না হয় ও যথাযথ কর্মসংস্থান পায়, সেজন্য সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপরও তিনি জোর দেন।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সারা দেশে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে এবং বিদেশি চাকরি প্রার্থীরা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিজেদের নিবন্ধন করতে পারেন।
নারী শ্রমিকদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানে যাচ্ছেন- তারা ভালো আছেন। কিন্তু যারা দালালদের খপ্পরে পড়েছেন তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সরকার যে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ক্যাম্পেইন চালু করেছে- সেই কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশ তার ফল পেতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছে, যা আগে হিসাব ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এবং মানুষ বেশি আয় করছে।
তিনি আরও বলেন, একজন দিনমজুর আগে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করত, এখন কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারে। সর্বনিম্ন আয় ৫০০-৬০০ টাকা।
গ্রামাঞ্চলে এ পরিমাণের চেয়ে বেশি আয় হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধান কাটার মৌসুমে দিনে তিনবেলা খাবারসহ মজুরির পরিমাণ ৭০০-৮০০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কেউ যদি গ্রামাঞ্চলে যায় তবে দেখা যাবে যে গ্রামীণ এলাকায় জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ সচ্ছল হয়ে উঠায় মাঝে-মধ্যে শ্রমিকের অভাবও দেখা যায়।