এ খাতে বিশৃঙ্খলারও অভিযোগ রয়েছে। সময় মতো পণ্য না পাওয়া, অন্য পণ্য পাওয়া বা পণ্য একেবারে না পাওয়া, পণ্য না পেয়ে টাকা ফেরত না পাওয়ার মতো নানান অভিযোগও আছে ই-কমার্সগুলোর বিরুদ্ধে। শুধু নীতিমালার ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হওয়ায় এ খাতের সমস্যাগুলো দূর হচ্ছে না। ই-কমার্স বিষয়ক কোনও আইন থাকলে এ খাত আরও এগিয়ে যেতো বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
দেশে ই-কমার্স পরিচালনার জন্য নীতিমালা রয়েছে ‘ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা’ শিরোনামে। এই নীতিমালায় দেশে ই-কমার্স কীভাবে পরিচালিত হবে,বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে এ দেশে ব্যবসায় করবে ইত্যাদি বিষয় তাতে উল্লেখ থাকলেও ই-কমার্স থেকে সেবা বা পণ্য কিনতে গিয়ে কোনও সমস্যা হলে, পণ্য সময় মতো ডেলিভারি না পেলে, যে পণ্য অর্ডার করা হয়েছিল তা না পেলে ক্রেতারা কোথায় যাবেন, অভিযোগ করে কীভাবে প্রতিকার পাবেন— তার কোনও উল্লেখ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল কমার্স আইন থাকলে দেশের ই-কমার্স সঠিকভাবে পরিচালিত হবে, ক্রেতাদের ভোগান্তি লাঘব হবে। ক্রেতারা অন্তত অভিযোগ জানানোর বা প্রতিকার পাওয়ার একটা উপায় খুঁজে পাবেন।
জানা গেছে, দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাব (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ‘মধ্যবর্তী’ হয়ে সমঝোতার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। অন্যদিকে রয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এখানে অভিযোগ করেও ক্রেতারা প্রতিকার চাইতে পারেন।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বর্তমানে ফেসবুকনির্ভর ই-কমার্স (এফ-কমার্স) উদ্যোক্তার সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। এদের বেশিরভাগই আমাদের সদস্য নয়। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান বা আমাদের সদস্য নয়— এমন কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনে কেউ প্রতারিত হলে আমাদের কিছু করার থাকে না। পণ্য ক্রয়ের আগে ক্রেতারা যদি দেখে নেন ওই প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবের সদস্য কিনা, তাহলে প্রতারণার মতো ঘটনা ঘটলেও প্রতিকারের অন্তত একটা পথ খোলা থাকে। আমরা শালিস বৈঠক করে অনেক সমস্যার সমাধান করেছি।’
ই-কমার্সে প্রতারিত হলে আছে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর
ই-কমার্স থেকে সেবা নিতে গিয়ে প্রতারিত হলে অভিযোগ জানানো যাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে। এই অধিদফতরে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুম আরেফিন জানান, সাধারণত তিন উপায়ে অভিযোগকারীদের সমাধান দেওয়া হয়। প্রথমত, দুই পক্ষকে আপস করতে বলা হয়। এই উদ্যোগে সমাধান হয় অনেক সময়। যদি অপরাধ প্রমাণ হয় তাহলে শাস্তির বিধান আছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারীকে দেওয়া হয়। আর যদি কোনও অপরাধ প্রমাণিত না হয় তাহলে অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়। কোনও ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য বা সেবা কিনে নির্দিষ্ট সময়ের (টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন অনুযায়ী) মধ্যে না পাওয়া, প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগাদা দিয়েও তা না পেলে ৩০ দিনের মধ্যে অধিদফতরে অভিযোগ করা যাবে। ১৬১২১ নম্বরে ফোন করেও অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে ই-কমার্স খাতের নিয়ন্ত্রণে আইনের কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মধ্যে একটি ধারা সংযোজন করে এ খাতের বিরাজমান বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তা না-হলে ডিজিটাল কমার্স নামে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরি করা যেতে পারে। আইন করা না হলে ই-কমার্স খাতে যে বিশৃঙ্খলা রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’
নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা বলেন, অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতারও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। শুধু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে দোষারোপ করলে হবে না, গ্রাহককেও দায় নিতে হবে। কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে (প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছাড়া) কেনাকাটা করার আগে সেই প্রতিষ্ঠানের সাইটে গিয়ে ভালো করে সব তথ্য দেখা উচিত, রিভিউ পড়া উচিত, রেফারেন্সও দেখা উচিত। ভালো প্রতিষ্ঠান হলে এগুলো থাকবে। যদি না থাকে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান এড়িয়ে যাওয়া ভালো। তিনি মনে করেন, প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স না হলে পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করা উচিত নয়। এজন্য ক্রেতারা ক্যাশ অন ডেলিভারি (সিওডি) বা পণ্য বুঝে পেয়ে অর্থ পরিশোধ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। তাতে কোনও ঝুঁকি থাকে না। পণ্য না পেলেও কোনও অসুবিধা নেই। তা ফিরে পাওয়ার জন্য অপেক্ষাও করতে হয় না। কিন্তু একবার অর্থ পরিশোধ করে সঠিক সময়ে পণ্য না পেলে, অন্য পণ্য পেলে বা একেবারে না পেলে সেই টাকা ফিরে পাওয়া বেশ ভোগান্তির। তিনি আরও বলেন, ফেসবুকনির্ভর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটায় আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ক্রেতাদের। অবশ্যই ফেসবুক পেজ থেকে কেনাকাটায় অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করা কোনও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে না। সিওডি (ক্যাশ অন ডেলিভারি) হলো এই খাতের আস্থার জায়গা। যদি ফেসবুক পেজ থেকে কেনাকাটা করতেই হয় তাহলে রিভিউ দেখে বা কারও রেফারেন্সে যাওয়া উচিত।