দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের নারী কর্মীদেরও ধান কাটায় অংশ নিতে দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ধান কাটার আহ্বান দেশজুড়ে যেন এক উৎসবে রূপ নিয়েছে। ছাত্রলীগের এমন কর্মসূচিতে খুশি কৃষকরা।
বগুড়ার পাঁচকাতুলী গ্রামের কৃষক মাসুদ করিম কচি বলেন, 'আমার মাত্র ৫ শতক জমির ধান পেকেছে। কিন্তু, এত অল্প ধান কাটার কোনো শ্রমিক পাচ্ছি না। তাছাড়া শ্রমিকের খরচও বেশি। ছাত্রলীগ এই খবর পেয়ে আমার ধান কেটে দিয়েছে। এভাবে সাধারণ কৃষকের ধান কেটে দিলে অনেক কৃষক উপকৃত হবে।'
নোয়াখালীর এক কৃষক রেজাউল করিম বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে শ্রমিকদের মজুরিও এবার বাড়তি। এদিকে আবার বাইরে থেকে শ্রমিক কম আসায় শ্রমিক সংকটও রয়েছে এবং ঝড় বৃষ্টির শঙ্কায় জমির পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এমন সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আমার জমির ধানগুলো কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দিয়েছে। তাদের এমন উদ্যোগে ভীষণ খুশি হয়েছি। তাদের জন্য হাত তুলে দোয়া করি। একই অনুভূতি দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের।
এদিকে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা যারা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছেন তাদের অনেককেই ধান কাটায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
সারাদেশের মতো কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের মনতলী গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান ও কৃষক জামালের ফসলি জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিশ জনের সহযোগিতা এ ধান কাটা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ধান কাটা শ্রমিকদের মজুরি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেকটাই বেশি, রয়েছে বাইরে থেকে শ্রমিক কম আসার সংকট। ঝড়বৃষ্টির শঙ্কায় জমির পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জমির ধানগুলো কেটে দিয়েছেন। তাদের এমন কাজে আমি ভীষণ খুশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের আহ্বান অনুযায়ী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান কেটে কৃষকের ঘুরে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় আমরাও নাঙ্গলকোটে কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী কৃষকদের সকল সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের যেকোনো দুর্যোগ, দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আগামীতেও আমরা সাধারণ মানুষের পাশে থাকবো।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ঐতিহাসিকভাবেই কৃষক এবং প্রান্তিক জনপদের বন্ধু। এবং একই সঙ্গে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় এ দেশের গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেছি এবং বর্তমান সময়ে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে তারা কৃষকের সন্তান, শ্রমিকের সন্তান। আমরা দুর্যোগে দুর্বিপাকে শুধু নয় কৃষকের উন্নয়নে কৃষি বিপ্লব বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়ন করার জন্য এবং স্মার্ট এগ্রিকালচার বাস্তবায়নের জন্য কৃষকদের সাথে নিয়ে কাজ করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। এ কারণেই বোরো মৌসুমে আমরা কৃষকের ধান কেটে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি। এটির মাধ্যমে তরুণরা আজ এমন স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। কৃষকদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা অনুভব করছে। কৃষি অর্থনীতিকে জোড়ালো করা এবং কৃষিকে আধুনিকায়ন করার ক্ষেত্রেও তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে মানবিক ছাত্র সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শুধু ছাত্রদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়েই সোচ্চার নয়, যে কোন দর্যোগ-দূর্বিপাকেও মানুষের পাশে। এখন কৃষকের ধান কাটার মৌসুম চলছে। অনেক কৃষক শ্রমিক পাচ্ছে না। সে কারণে আমরা কৃষকের পাশে দাঁড়াতে সারাদেশের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ব্যাপক সাড়া পড়েছে। যারা কাজ করছেন তাদের ধন্যবাদ। অন্যদেরও আহ্বান জানাবো কৃষকের পাশে দাঁড়াতে।