গত বছরের জানুয়ারিতে কর্নাটকের এক স্কুলে হঠাৎ হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা জারি করে, ‘হিজাব বা কোনো ধর্মীয় পোশাক পরে ক্লাস অংশ নেয়া যাবে না। বোরকা বা হিজাব পরে প্রতিষ্ঠানে এলেও শ্রেণিকক্ষে তা খুলে ফেলতে হবে। সেখানে স্কুল ইউনিফর্মই একমাত্র পোশাক।’
এরপর ক্রমেই রাজ্যের অন্যত্র এমন নির্দেশনা দিতে থাকে নানা প্রতিষ্ঠান। পরে এ নিয়ে ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি হয়। রাজধানী বেঙ্গালুরুতেও সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে। ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মুসলিম ছাত্রীরা ওই নির্দেশনা বিরুদ্ধে কর্নাটক হাইকোর্টে মামলা করেন। কিন্তু কর্নাটক হাইকোর্ট জানিয়ে দেন, হিজাব ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ নয়। স্কুলের ইউনিফর্মই শেষ কথা। ওই মামলা এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন রয়েছে।
রাজ্যে হিজাব বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন তাবাসসুম ও তার অন্য পাঁচ বান্ধবী বেঙ্গালুরুর স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অনেক দিন বাড়ি বসে ছিলেন। এরপর পরিবারের পরামর্শে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
দ্য টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাবাসসুম বলেন, ‘বাবার কথায় আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। বাবা বলেছিলেন, দেশের আইন মানা জরুরি। তেমনই জরুরি নারীর শিক্ষালাভ। আজ আমাদের নারীরা যদি শিক্ষা লাভ না করে, তবে আমাদের জাতি আরো পিছিয়ে যাবে।’
তাবাসসুম বলেন, ‘কোনো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পোশাকের ওপর সরকারি বিধি-নিষেধ থাকা উচিত নয়। শিক্ষাগ্রহণ ও ধর্মাচরণ দু’টিই আমার অধিকার। এটা খুবই অযৌক্তিক যে শিক্ষা অর্জনের জন্য আমাকে হিজাব পরিত্যাগ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের পরামর্শে স্কুলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই। পাঁচ বছর বয়স থেকে হিজাব পরে আসছি। হিজাব পরতে আমার ভালোও লাগে। পোশাকটির প্রতি একটা অধিকারবোধ জন্মে গিয়েছিল।’
তাবাসসুম বলেন, ‘অনেকে টিটকিরি দিয়েছে। কিন্তু সব সহ্য করেছি। মা-বাবা-বড় ভাইয়ের কথা সব সময় মাথায় রাখতাম। তারা বলতেন, প্রতিবাদের নামে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে যারা চায় না মেয়েরা শিক্ষা পাক, তাদের উদ্দেশ্যই সফল হবে।’
স্কুলের পোশাকবিধি কলেজে নেই। ফলে তাবাসসুম হিজাব পরেই কলেজে ক্লাস করতে পারবেন। তবুও রাজনীতির গতি- প্রকৃতিতে কিছুটা সন্দিহান তিনি। ভবিষ্যতে নতুন কোনো ফরমান জারি হবে কিনা, সে বিষয়ে তাবাসসুম নিশ্চিত নন।
সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ/সিয়াসত ডেইলি