সিএনএন জানায়, নিজেদের শেয়ার কেনা বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ডের জন্য অভূতপূর্ব কোনো ব্যাপার ছিল না। কিন্তু নগদ অর্থের সংকটে ভুগতে থাকা একটি কোম্পানির জন্য এই টাকা আরও ভালোভাবে খরচ করা যেত।
কোম্পানিটি আগেই জানিয়েছিল যে শেষ মুহূর্তে যদি কোনো বিনিয়োগকারী তাদের বাঁচাতে এগিয়ে না আসে, তবে তাদের সবগুলো দোকান বন্ধ করে দিতে হতে পারে। বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড মরিয়া হয়ে উঠেছিল এবং শেষ পর্যন্ত নিজেদের শেয়ারের দাম ধরে রাখতে গিয়ে তাদের সব কিছু খোয়াতে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনে যে প্রতিবেদন বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড জমা দিয়েছে, তাতে তারা দেখিয়েছে যে তাদের ঋণের পরিমাণ ৫২০ কোটি ডলার। এর দ্বিগুণ অর্থ, অর্থাৎ ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার তারা ২০০৪ সাল থেকে খরচ করেছে নিজেদের শেয়ারের পেছনে। তবে ঋণের ভার শেষ পর্যন্ত তাদেরকে পিষ্ট করেছে।
নিজেদের দোকানগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা এবং তা বিক্রি করে লোকসানের পরিমাণ কমিয়ে আনতে যে অর্থ তাদের দরকার ছিল, বিপুল ঋণের বোঝা বইতে থাকা কোম্পানিটির হাতে সেই পরিমাণ অর্থ আদতে ছিল না।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের রিটেইল পরিচালক এবং ক্রেডিট বিশ্লেষক ডেকলান গ্যারগান দীর্ঘদিন ধরে বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ডের উত্থান–পতন অনুসরণ করছেন। তিনি বলছিলেন, কোম্পানির পুঁজি পরিচালনা ব্যর্থ হয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারদের চাপ
বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড বিশেষভাবে শেয়ার কেনা শুরু করে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে। সেই সময়ে তারা নিজেদের শেয়ার কেনার জন্য ২০০ কোটি ডলার ঋণ করে। শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণে কিছু সক্রিয়বাদী শেয়ারহোল্ডার কোম্পানির ওপর একধরনের চাপ তৈরি করছিল।
এর আগপর্যন্ত কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। কিন্তু ২০০ কোটি ডলার ধার করার বিষয়টি বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ডকে বড় একটি ঋণের বোঝার দিকে ঠেলে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটি তাদের সামর্থের বাইরে চলে যায়।
এসঅ্যান্ডপির ভোক্তা ও রিটেইল খাতের প্রধান ক্রেডিট বিশ্লেষক সারাহ উয়াইয়থ বলেন, ‘আমরা মনে করছি, পুঁজি বিনিয়োগকারীদের প্রতি তাদের নজর দিতে হতো। সাধারণত আমরা ব্যবসার জন্যই অর্থ বিনিয়োগ করার পক্ষপাতী। সরাসরি শেয়ার কেনার তুলনায় এমনকি একত্রীকরণ ও অধিগ্রহণ কম ঝুঁকিপূর্ণ হতো।’
বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেকটা মরিয়া হয়ে নিজেদের শেয়ার কিনেছে। তিন মাসেই তারা শেয়ার কেনার পেছনে খরচ করেছে ২৩ কোটি ডলার। প্রতিটি শেয়ারের পেছনে তাদের খরচ ছিল ১৬ দশমিক শূন্য ৪ ডলার।
কিন্তু এই মরিয়া চেষ্টাও শেষ পর্যন্ত কোনো ফল আনতে পারেনি। গত বছর তাদের শেয়ারের দাম ৮৩ শতাংশ পড়ে যায়। এ বছর এখন পর্যন্ত তাদের শেয়ারমূল্যের পতন হয়েছে ৮৮ শতাংশ। গত শুক্রবার তারা যখন দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার জন্য আবেদন জানায়, তখন তাদের শেয়ারের দাম কমে দাঁড়ায় মাত্র ২৯ সেন্টে।
নিজস্ব শেয়ার কেনার হিড়িক
বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ডের নিজেদের শেয়ার কেনা যুক্তরাষ্ট্রে অনন্য কোনো ব্যাপার নয়। অন্যতম বড় তেল কোম্পানি শেভরন সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার খরচ করে নিজস্ব শেয়ার কিনবে। তেলের অতিরিক্ত দামের কারণে তারা যে রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করেছে, সেখান থেকে তারা এই অর্থ পেয়েছে।
শেয়ারবাজার সূত্রের খবর, গত বছর আমেরিকার কোম্পানিগুলো রেকর্ড পরিমাণ ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার খরচ করেছে নিজস্ব কোম্পানির শেয়ার কেনার পেছনে। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার। আর চলতি বছর নিজস্ব শেয়ার কেনার পেছনে কোম্পানিগুলোর খরচ ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
তবে বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড অবশ্য নিজেদের শেয়ার কিনে ফতুর হয়ে দেউলিয়া আদালতে যাওয়া প্রথম খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি নয়। সিয়ার্স অ্যান্ড কেমার্ট ব্র্যান্ডের মালিক সিয়ার্স হোল্ডিংস ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিজস্ব শেয়ার কেনার পেছনে ৬০০ কোটি ডলার খরচ করে। পরে ২০১৮ সালে তারা নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়।
শেয়ার পুনরায় কিনে নেওয়ার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের হাতে পরোক্ষভাবে অর্থ তুলে দেয়। অনেক সময় কোম্পানির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, যাতে তারা নিজস্ব শেয়ার কিনে নেয়। বেড, বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ডের ওপর চাপ ছিল শেয়ার পুনরায় কিনে নেওয়ার। তবে এমনকি শেয়ার কেনার পরও ২০১৯ সালে শেয়ারহোল্ডারদের চাপে কোম্পানির শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হয়েছিল।
তবে নিজস্ব শেয়ার কেনার বিষয়টি বিতর্কের উর্ধ্বে নয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মাঝেমধ্যেই এর সমালোচনা করেন। গত বছর কংগ্রেসে যে মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন পাস হয়েছে, তাতে তিনি নিজস্ব শেয়ার পুনরায় কিনে নেওয়ার ওপর ১ শতাংশ হারে কর আরোপের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছেন।