হঠাৎ করে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ কী? খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। তবে পোলট্রি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ফিডসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বেড়ে গেছে। ফলে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে এর দামের ওপর। তবে ব্যবসায়ীদের এ বক্তব্য মানতে নারাজ ভোক্তারা। তারা বলেছেন, ব্রয়লার মুরগির বাজারে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেট তাদের ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।
গত মাসে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বাণিজ্য সচিবকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। আর প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সার্বিক বিবেচনায় বাজারে তা ২০০ টাকার বেশি বিক্রি হওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বাজারে মুরগির দাম কত হওয়া উচিত, তা আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে অনুরোধ করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে সরকারের আরেক প্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রিশিল্পের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মুরগির দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আবার বাড়তি। টিসিবির এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এক বছর আগে দেশের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এবার পবিত্র রমজানের শুরুতেও রীতিমতো লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে ব্রয়লার মুরগির দাম। সেসময় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২৮০ টাকায় উঠে যায়। সেসময় পোলট্রি খাতের বড় চার প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস লিমিটেড, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ এবং প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বৈঠকের পর তারা রমজান মাসে তাদের খামার থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেয়। তখন মুরগির দাম কমে আসে। এখন ঈদের পর আবার ব্রয়লার মুরগির বাজার লাগামহীন।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন বলেন, সব খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, গত কিছুদিন ধরেই এই খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অস্থিরতা নিরসনে সরকারকে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
খোন্দকার মো. মহসিন বলেন, এ খাতে উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র খামারিরা টিকতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, সারা দেশে ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯টি খামারের মধ্যে বর্তমানে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার চালু আছে। এতে উৎপাদন (মুরগির মাংস) হচ্ছে ৪ হাজার ২১৯ টন, যা উৎপাদন সক্ষমতা থেকে ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। তিনি বলেন, পোলট্রি সেক্টরে এমন নাজুক অবস্থা আগে কখনো আসেনি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতি পোষাতে না পেরে খামার বন্ধ করে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়েছেন। এ সুযোগে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পোলট্রির ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদনে গেলে তখন বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে ক্ষতিতে ফেলছেন। সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদারের স্বাক্ষর করা এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে। চুক্তিভিত্তিক খামারও রয়েছে তাদের। এতে করে বাজার তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা না গেলে এই খাতের অস্থিরতা কমানো সম্ভব নয়।
অর্থসংবাদ/এসএম