এবার ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে অন্তত ছয় লাখ পর্যটকের আগমনে চিরচেনা রূপে প্রাণের ডানা মেলেছে সৈকতের সব কটি পয়েন্ট সহ পর্যটন স্পটে।
ঈদের দিন ২২ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজারে ছিল পর্যটকের চাপ।
শুক্রবার সকালে সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সি গাল, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের বালিয়াড়িতে দেখা মিলেছে পর্যটকসহ স্থানীয় মানুষের আনাগোনা। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছে, গত সাত দিনে অন্তত ছয়লাখ পর্যটকের আগমন হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে।
তীব্র গরমের মাঝেও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঢল নেমেছে লাখো পর্যটকের। যান্ত্রিকতার জীবন ছেড়ে সাগরজলে আনন্দ আর উল্লাসে মেতেছেন তারা। পর্যটকরা বলছেন, তীব্র গরমের মাঝে সাগরজলে স্বস্তি মিলছে। এদিকে পর্যটকের ভিড়ে ব্যস্ততা বেড়েছে সৈকতপাড়ের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক, জেড স্কি ও ঘোড়াওয়ালাদের। আর সমুদ্রস্নানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ৩ স্তরের ব্যবস্থা নিয়েছে লাইফ গার্ড সংস্থা।
দেখা যায়, সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউয়ে শরীর ভিজিয়ে টিউব নিয়ে সাঁতার কেটে উপভোগ করছেন স্বচ্ছ সাগরের জলরাশি। আবার অনেকেই জেড স্কিতে চড়ে ঘুরে আসছেন ঢেউয়ের তালে তালে। সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘোরাফেরা, কিটকিটে (বিচ ছাতা) বসে সাগরের শীতলতা উপভোগেও ব্যস্ত ছিলেন অনেকে। ঈদ উৎসব ঘিরে কক্সবাজার সৈকতে ছিল সব বয়সী মানুষের আনন্দ-উল্লাস।
ভ্রমণে আসা নারায়নগঞ্জের আশফাক আহমেদ জানান, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার এসে ভিন্ন এক সৈকত উপভোগ করতে পারছেন। স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সাগর একটু উত্তাল। স্ব-পরিবারে এসে ভালো লাগছে।
ঢাকা থেকে আসা মনির আহমেদ বলেন, ‘তিন দিনের জন্য কক্সবাজারে আসা। আজকে লাখের কাছাকাছি পর্যটক হবে। অন্যবারের চেয়েও এবার ভ্রমণে এসে বাড়তি আনন্দ পাচ্ছি। তবে অসম্ভব গরম।
সৈকতে দায়িত্বরত বিচ কর্মী মাহাবুব জানিয়েছেন, কক্সবাজারের সৈকত ছাড়াও পর্যটকরা ঘুরছেন হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ার টেক ও মেরিন ড্রাইভে।
বেলা ১২টা দেখা যায়, সৈকতের উত্তপ্ত বালুচরে খালি পায়ে হাঁটা যাচ্ছে না। দৌঁড়ে কোনরকমে বালুচর পেরিয়ে সাগরজলে নেমে পড়ছেন পর্যটকরা। সাগরতীর জুড়ে মানুষ আর মানুষ। তীব্র গরমের কারণে পর্যটকরা ভিড় করেছেন সাগরজলে। মেতে রয়েছেন সমুদ্রস্নানে। টিউব নিয়ে গা ভাসানোর পাশাপাশি একে অপরকে পানি মারার খেলায় মেতেছেন। আর এসব মুহুর্তে বন্দি করা হচ্ছে ক্যামেরার ফ্রেমে।
এদিকে লাখো পর্যটকের সমাগমে ব্যস্ত সৈকতপাড়ের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক ও জেড স্কি চালক এবং ঘোড়াওয়ালা। বলছেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকের সমাগমে ভালো ব্যবসা হচ্ছে তাদের।
গরমে সাগরজলে সমুদ্রস্নানে স্বস্তিতে পর্যটকরা। তাই পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে লাইফ গার্ড সংস্থা।
সি সেফ লাইফ গার্ডের কর্মী জয়নাল আবেদীন ভুট্টো জানান, বৈশাখের তীব্র রোদ, তার সঙ্গে উত্তাল সাগর। তাই লাখো পর্যটকের সমুদ্রস্নানে তিন স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছেন সৈকতপাড়ের লাইফ গার্ড কর্মীরা। পর্যটকদের সতর্ক করার পাশাপাশি সজাগ দৃষ্টি রাখছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, পর্যটন স্পট, হোটেল-মোটেল জোন ও সৈকতে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। পোশাকধারীর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকরা নিরাপদে ভ্রমণ করে ঘরে ফিরতে পারবেন। আর তীব্র গরমের কারণে সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা ধরণের সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
অর্থসংবাদ/এসএম