ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণখেলাপি হয়ে পড়ার সম্ভবনাকে এখনো ক্ষীণ মনে করা হয়েছে। তার পরও যদি হয়ে যায়, তাহলে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়তো ঘটবে না। ‘প্যানমিউর গর্ডনের’ প্রধান অর্থনীতিবিদ সাইমন ফ্রেঞ্চ দাবি করেছেন, এমন কিছু ঘটলে তা ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের তুলনায় খুব সামান্য হিসেবেই বিবেচিত হবে। তখন বিশ্বের অনেক বড় ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়েছিল। মারাত্মক মন্দা দেখা দিয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতিতে। যদি মার্কিন সরকারের ঋণের সর্বোচ্চ সীমা না বাড়ে, নতুন করে অর্থ ধার করতে পারবে না সরকার। ফলে দ্রুত খালি হয়ে যাবে ব্যাংক। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কমবে। নাগরিকরা যেসব সুবিধা পাচ্ছেন, তা থেকে বঞ্চিত হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। অচলাবস্থা তৈরি হবে মার্কিন অর্থনীতিতে।
দ্য হোয়াইট হাউজ কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্সের প্রাক্কলন অনুসারে, যদি মার্কিন সরকার নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছতে না পারে, তাহলে দেশটির অর্থনীতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হবে। মন্দার প্রভাব পড়বে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে। আর এ দুই দেশের অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে প্রভাব পড়বে সেসব দেশগুলোয়, যারা বাণিজ্যিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
সাইমন ফ্রেঞ্চ বিষয়টিকে কেবল বাণিজ্যিক দিকে ভাবতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে মন্দার প্রভাব পড়বে বাড়ি কেনা খাতেও। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বাড়বে বাড়ির দাম। কারণ স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ব্রিটিশ সরকারের খেলাপি হওয়ার ভয়। তখন তারা বন্ড কেনার জন্য অতিরিক্ত সুদ দাবি করবে। ফলে বাড়বে সুদের হারও।’
অন্যদিকে মার্কিন অর্থনীতিতে প্রভাবিত হবে ডলার। যেহেতু সারা বিশ্বে সব ধরনের বিনিময় ডলারে হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপাদিত পণ্যের আমদানি ও রফতানি নির্ভর করে এ মুদ্রার ওপর। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দূর প্রাচ্যে ডলারের ভিত্তিতেই নির্ধারণ হয় পণ্যের দাম। মার্কিন অর্থনীতি ধসে পড়লে ডলারের অবমূল্যায়ন হবে। ফলে যারা আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগ করছে, তারা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হবে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বে পরবর্তী কোনো দেশের পতনের আশঙ্কায়। বলতে গেলে সবকিছুর জন্যই দাম নির্ধারণ করতে হবে নতুন করে। ফলে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সবকিছুর দামই বেড়ে যাবে। বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়।
আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারের ৬০ শতাংশ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। ফলে পেনশন তহবিলের যে অংশ মার্কিন সরকার বিনিয়োগ করে রেখেছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে বাধাগ্রস্ত হবে পেনশনের পয়সা। ২০১১ সালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঋণ নিয়ে অচলাবস্থার তৈরি হয়েছিল। তখন সংকটের সমাধান হয়েছিল নির্ধারিত সীমার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। একবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল অর্থনীতি। এবারো তেমন একটা প্রত্যাশা থেকেই যাচ্ছে। ফলে খেলাপি ঋণের আশঙ্কা হয়তো খুব দ্রুতই কেটে যাবে।