সংস্থাটির সাম্প্রতিক মূল্যায়নে বাংলাদেশের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা ও তারল্যঝুঁকির পাশাপাশি চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে বিদেশি ঋণ পরিশোধের যে সক্ষমতা- তার নিরিখে বাংলাদেশ সংস্থাটির ঋণমান সূচকে বি৩’র পরিবর্তে বি১ ক্যাটাগরিতে অবস্থানের জন্য উপযুক্ত।
বস্তুত চলমান ডলার সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস অব্যাহত থাকায় দিন দিন বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ছে। এই চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার, কিন্তু তার জেরে ইতোমধ্যে দেশে জ্বালানির ঘাটতি শুরু হয়েছে।
আবার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সরকার যে আমদানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে— ব্যাপারটি এমনও নয়। মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসের মতে, একাধিক বিনিময় হার চালু এবং সুদের হার ঠিক করে দেওয়ার মতো অপ্রচলিত যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেসব দেশটি প্রত্যাহার করেনি এখনও। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সুস্থির হতে পারছে না।
মূল্যায়নের শেষ পর্যায়ে মুডিস জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার, তার সাপেক্ষে দেশটি কর আদায়ের হার বেশ নিম্ন এবং বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার ঘন ঘন অবমূল্যায়ন ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
মুডিসের মূল্যায়নে অবশ্য অর্থনীতির এই সংকট নিরসনে পরোক্ষ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি আশা করছে, বিদেশি অর্থায়ন বৈদেশিক ও রাজস্বসংক্রান্ত চাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে।
তবে চাপ কমলেও মহামারির পূর্বের পরিস্থিতির তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি সামনের দিনগুলোতে দুর্বল থাকবে এবং উঁচু মাত্রার ঋণের কারণে রাজস্বেও ঘাটতি থাকবে বলে উল্লেখ করেছে মুডি’স। বিশেষ করে মুডিস মনে করছে, যেসব রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়ে সুফল পেতে আরও অনেক বছর লেগে যাবে।
অর্থনীতি চাপের মধ্যে থাকলেও প্রায় নিয়মিত কম সুদে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থায়ন ও সহায়তা পেয়ে পাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে বৈদেশিক ও রাজস্ব খাতে যতখানি চাপ হওয়ার কথা, তা ঘটবে না বলে আশা জানিয়েছে মুডিস।
বাংলাদেশের ঋণভার একই পরিস্থিতিতে থাকা অন্যান্য দেশের তুলনায় মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে এবং কম সুদে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণ নেওয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে মুডিসের মূল্যায়নে।
অর্থসংবাদ/এসএম