আরেক দফা বাড়ল চিনির দাম

আরেক দফা বাড়ল চিনির দাম
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ফের অস্থির চিনির বাজার। চিনি আমদানিকারকরা কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। খাতুনগঞ্জে কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি মনে (৩৭.২৩৭ কেজি) চিনির দাম বেড়েছে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

বর্তমানে প্রতি মন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। যা ৪দিন আগেও ছিল ৪ হাজার ৪০০ টাকার কাছাকাছি। একইভাবে পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি।

এদিকে সবজির দামও আকাশচুম্বী। তবে ক্রেতারা বলছেন, চিনির বাজারে প্রশাসনের কোনো ধরনের নজরদারি নেই। যার ফলে ব্যবসায়ীরা কিছুদিন পর পর ইচ্ছেমতো দাম বাড়ান।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, চিনির দামে ফের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজারে যে পরিমাণ চিনির চাহিদা রয়েছে সরবরাহ তার চেয়ে অনেক কম। ফলে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতে চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক কয়েকটি সিন্ডিকেট চিনির বাজার জিম্মি করে রেখেছে। সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চিনির বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে তারা।

এদিকে বাজার থেকে অনেকটা উধাও হয়ে গেছে মোড়কজাত চিনি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না চিনি। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকার বেশি দামে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকা দরে।

গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়-বাজারে চিনির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখা, সাধারণ ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) কর্তৃক প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (খোলা) মিলগেটে মূল্য ১১৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (প্যাকেট) মিলগেটে ১১৯ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২১ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়। এ দামে চট্টগ্রামের কোথাও চিনি বিক্রি হচ্ছে না।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা পর্যায়ে দুদফা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে তদারকির অভাবে ভোক্তা পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। সরকার কেজিপ্রতি খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চিনির মন (৩৭.৩২ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। কেজি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ দশমিক ৯৪ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা কয়েক দিন আগে মনপ্রতি চিনির দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমদানিকারকরা নানা অপকৌশলে চিনির দাম বাড়াচ্ছে। একদিকে আমদানিকারকরা ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এরপরপরই চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়। অজুহাত দেওয়া হয় সরবরাহ কমার কারণে চিনির দাম বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। কোনো পণ্যের লেনদেন ছাড়াই একটি ডিও কয়েক দফা হাতবদল হয়। যতবার হাতবদল হয় ততবার ডিও বা পণ্যের দামও বেড়ে যায়। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে কয়েক দফা আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়।

ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে প্রবেশের পর থেকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে। এখন পাইকারি বাজারে ভালোমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। আরও একটু নিুমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকার কিছু বেশি দামে। তবে খুচরা বাজারে এখনো তেমন প্রভাব নেই। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। খুচরা বাজারেও কয়েকদিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে দাম কমবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, খুচরা যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা আগের বেশি দামে কেনা। এ কারণে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন আমদানি করা পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করতে পারব।

বাজারদর : চট্টগ্রামের কাঁচা বাজারে সবজির দামের উত্তাপ কমছে না। গ্রীষ্মকালীন সবজি বাজারে থাকলেও অধিকাংশ সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার বেশি। শুক্রবার প্রতি কেজি বেগুন ৬০, চিচিঙ্গা ৭০, টমেটো ৫০, বরবটি ৮০, পটোল ৮০, লতি ৫০, ধুন্দল ৯০, ঢেঁড়শ ১শ, করলা ১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩শ, কাতলা ৩শ থেকে ৩২০, পাঙাশ ২২০, শিং ৫৫০, টেংরা ৪৫০, কই ২৫০ ও চিংড়ি ৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা ৪শ, টেংরা ৪৫০, শিং ও সমুদ্রের কোরাল ৫শ টাকা, কই ২৬০ এবং পাঙাস ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া মাংসের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১৫ থেকে ২২০, কক ৩৪০ ও পাকিস্তানি লেয়ার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮শ এবং খাসি ১১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ