বুধবার (১৪ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি আরো বলেন, যা গতবছরের চেয়ে এবার চার লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টির বেশি গবাদিপশু রয়েছে। এ বছর কোরবানির গবাদিপশুর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং দুই হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আট লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে চার লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে চার লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, গত ৪-৫ বছরের মতো এবারও দেশে উৎপাদিত গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। বিদেশ থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত পথে যাতে অবৈধভাবে গবাদিপশু আসতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে পত্র দেয়া হয়েছে।
কোরবানি সামনে রেখে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য, স্টেরয়েড, হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে এ বছরও স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ বছর ৭২ হাজার ৫৬৩ জন খামারিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এ সময় পশুখাদ্যে ভেজাল বা নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনের ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত সার্ভিল্যান্স ও প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ বছর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সারাদেশে ৮৭ হাজার ৯৫টি খামার পরিদর্শন করে। এসব খামারে স্টেরয়েড বা হরমোনের অপপ্রয়োগ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। কোরবানির হাটে এ বছর কোনোভাবেই রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। গত বছর সারাদেশে তিন হাজার ১৯৫টি কোরবানির পশুর হাটে দায়িত্ব পালনের জন্য এক হাজার ৬২৩টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনার জন্য মনিটরিং টিম গঠন ও কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।
মন্ত্রী জানান, এবারও কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকার ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে। হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল আদায় করতে পাবে না।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বিগত বছর ছয়টি পশুর হাটে ৩৩ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন হয়েছে। এ বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে ক্যাশলেস বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে কিউআর কোড, স্মার্ট অ্যাপ, এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেলস মেশিন, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা হবে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় ২৬টি জেলায় ১০টি ব্যাংক ও ৩টি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডারের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করেছে।
অর্থসংবাদ/এসএম