তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা এবং প্রবাসী আয়ে উৎসাহিত করার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ফলে আগামীতে রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।
রিজার্ভ কমার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭–১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কোভিড পরবর্তীকালীন চাহিদা বাড়ায় ২০২১–২২ অর্থবছরে আমদানি বেড়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়। এ চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে পরবর্তীতে তা কমতে শুরু করে।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার হার আরও বেড়ে যায়। সবশেষ ৩১ মে’র হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ হয়েছে ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। যা চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পতিত জমি চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে।
কৃষিখাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ২২টি কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের কৃষিখাত অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে সরকার।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুর উদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগ খাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তা এখন সব মহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে যোগাযোগ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প ও আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েছে সেতু বিভাগ। এরমধ্যে রয়েছে- প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ঢাকা শহরে ২৫৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণ, ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইনার এলিভেটেড সার্কুলার রোড নির্মাণ, ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর প্রায় ২.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, বরিশাল-ভোলা সড়কে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর ওপর ১০.৪৯ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ, বরিশাল জেলায় রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মুলাদি হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ সড়কে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ১.৫৯ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার বাকেরগঞ্জ-বাউফল সড়কে কারখানা নদীর ওপর ১.৮৮ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ, শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর ৮ কিলোমিটার সেতু বা টানেল নির্মাণ।
তিনি জানান, পটুয়াখালী জেলায় লেবুখালী-দুমকী-বগা-দশমিনা-গলাচিপা-আমড়াগাছি সড়কে গলাচিপা নদীর ওপর ১.৫৮ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ, পটুয়াখালী জেলায় পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা সড়কে পায়রা নদীর ওপর ২.৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, বরগুনা জেলার বরগুনা-পাথরঘাটা সড়কে বিষখালী নদীর ওপর ২.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, মতলব উত্তর-গজারিয়া সড়কে মেঘনা নদীর ওপর ১.৮৫ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ এবং গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে মেঘনা নদীর ওপর ২.৩০ কিলোমিটার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।