সিআইএ-এর পরিচালক উইলিয়াম জে বার্নস বলেছেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার লোকজন যেভাবে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছে তার ফলে সিআইএর পক্ষে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আমেরিকার এই শীর্ষ গোয়েন্দা যুক্তরাজ্যের ডিচলে ফাউন্ডেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই মন্তব্য করেন। রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের বিদ্রোহের সপ্তাহ খানেক পরে তিনি এই ভাষণ দেন।
বার্নস বলেন, প্রিগোশিন মস্কোকে যেভাবে “সশস্ত্র চ্যালেঞ্জ” জানিয়েছেন তার প্রতি সকলেরই “মনোযোগ” আকৃষ্ট হয়েছে, যখন তার ভাড়াটে সৈন্যরা রাশিয়ার রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
সিআইএ-র প্রধান বলেন, প্রিগোশিনের এই বিদ্রোহ পরিষ্কারভাবে মনে করিয়ে দিয়েছে যে এই যুদ্ধের কারণে পুতিনের নিজের সমাজ ও নিজের সরকার কীভাবে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।”
বার্নস বলেন, শুধু যে প্রিগোশিনের কর্মকাণ্ডেরই প্রভাব পড়ছে তা নয়, তার বিভিন্ন বক্তব্য- যেখানে তিনি এই যুদ্ধের যৌক্তিকতা ও বাস্তবায়ন এই উভয় বিষয়েই প্রশ্ন তুলেছেন- তার প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে পড়তে থাকবে। এই যুদ্ধের ব্যাপারে যে অসন্তোষ তা রুশ নেতৃত্বকে আরও বেশি ক্ষয় করে ফেলবে।
তিনি বলেন, এই অসন্তোষ তাদের সিআইএ-র জন্য বিরল এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যার ফলে সংস্থাটি এখন রাশিয়ার ব্যাপারে গোপন তথ্যের জন্য রাশিয়া থেকে সহজেই গুপ্তচর সংগ্রহ করতে পারবে।
রাশিয়া থেকে গুপ্তচর সংগ্রহের লক্ষ্যে সিআইএ সম্প্রতি সোশাল মিডিয়াতে নতুন করে প্রচারণা চালাতে শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে টেলিগ্রামে পোস্ট করা হয়েছে একটি ভিডিও। রাশিয়াতে লোকজনের কাছে এই সামাজিক মাধ্যমটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এই ভিডিওতে নজরদারি এড়িয়ে কীভাবে ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে সিআইএ-র সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে সে বিষয়ে কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম সপ্তাহেই এই ভিডিওটি ২৫ লাখ বার দেখা হয়েছে।
অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তাদের মতো সিআইএ-এর পরিচালক বার্নস আবারও বলেছেন, প্রিগোজিনের বিদ্রোহে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
তবে ওয়াশিংটন পোস্টে সম্প্রতি একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে যে ওয়াগনারের বিদ্রোহের আগে তিনি গোপনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর করেছিলেন। এই রিপোর্টের বিষয়ে বার্নস সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
ওয়াশিংটন পোস্টের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার ওই সফরে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- রুশ বাহিনীর ওপর ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় উল্লেখযোগ্য কিছু এলাকা যদি পুনর্দখল করে নেওয়া যায় তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার রাস্তা তৈরি হতে পারে।
বার্নস - যিনি ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাশিয়াতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন – তিনি বলেছেন, গত দুই দশক ধরে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং এ কারণে পুতিন ও রাশিয়াকে তিনি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারেন।
তবে তিনি বলেছেন, একটা বিষয় তিনি শিখেছেন এবং সেটা হচ্ছে ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট পুতিনের যে মোহ সেটাতে তারা সবসময়ই খাটো করে দেখেছেন।
বার্নস বলেন, রুশ নেতা পুতিন বিশ্বাস করেন যে ইউক্রেন ছাড়া রাশিয়া বড়ো শক্তি হতে পারবে না এবং পুতিন নিজেও বড় একজন নেতা হতে পারবেন না। তার এই মর্মান্তিক ও পাশবিক মোহ রাশিয়ার জন্য ইতোমধ্যে দুর্নাম বয়ে এনেছে এবং এর দুর্বলতাগুলো বের হয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘পুতিনের এই যুদ্ধে ইতোমধ্যেই রাশিয়ার কৌশলগত ব্যর্থতা এবং এর সামরিক দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে গেছে।’