২০২২-২৩ মৌসুম শেষ হয়েছে গত মাসে। এ মৌসুমে খাদ্যশস্য উৎপাদন নিয়ে চূড়ান্ত হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক হিসাবে আইজিসি জানায়, গত মৌসুমের তুলনায় এ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমতে পারে। উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে ভুট্টা।
২০২১-২২ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ২২৯ কোটি ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল। ২০২২-২৩ মৌসুমে উৎপাদন কমে ২২৫ কোটি ৯০ লাখ টনে নামতে পারে। আগের পূর্বাভাসের তুলনায় উৎপাদন ২০ লাখ টন কমবে বলে জানিয়েছে আইজিসি। বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৪২ কোটি ৬০ লাখ টন থেকে কমে ৪২ কোটি ৪০ লাখ টনে নামতে পারে। এদিকে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার বেড়ে ২২৬ কোটি ৭০ লাখ টনে পৌঁছতে পারে। ২০২১-২২ মৌসুমে ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ২২৯ কোটি ৬০ লাখ টন।
মাসভিত্তিক গ্রেইন মার্কেট রিপোর্টে আইজিসি জানায়, সদ্য বিদায়ী মৌসুমে ভুট্টার বৈশ্বিক উৎপাদন গত মৌসুমের তুলনায় ৬ শতাংশ কমতে পারে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১১৫ কোটি ৬০ লাখ টনে। ২০২১-২২ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ১২২ কোটি ৪০ লাখ টন। শস্যটির বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৮ কোটি টন থেকে কমে ১৭ কোটি ৩০ লাখ টনে নামতে পারে। এদিকে শস্যটির ব্যবহার ১২১ কোটি ৭০ লাখ টন থেকে কমে ১১৭ কোটি ২০ লাখ টনে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভুট্টা উৎপাদন কমলেও গম উৎপাদন বাড়বে বলে জানিয়েছে আইজিসি। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২২ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭৮ কোটি টন। ২০২২-২৩ মৌসুমে তা বেড়ে ৮০ কোটি ৩০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। গমের বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২০ কোটি ৩০ লাখ টনে। এর আগের মৌসুমে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি ৬০ লাখ টন।
এদিকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমার প্রভাবে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক আমদানি ব্যয় চলতি বছর রেকর্ড সর্বোচ্চে উন্নীত হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
এফএও সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৩ সালে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক আমদানি ব্যয় ২০২২ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ৯৮ ট্রিলিয়ন ডলারে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দামের কারণে ২০২৩ সালে খাদ্যপণ্য আমদানি বাবদ বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার। সরবরাহ খাতে ব্যয় হবে অতিরিক্ত ১ হাজার ২৯০ কোটি ডলার। তবে জাতিসংঘের সংস্থাটি জানায়, গত বছরের তুলনায় এবার আমদানি ব্যয় বাড়ার গতি থাকবে কিছুটা ধীর। ২০২২ সালে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ১১ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ১৮ শতাংশ।
সংস্থাটি বলছে, বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তি। মূলত ফল, সবজি, চিনি ও দুগ্ধপণ্য দাম বাড়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বেশি দামের কারণে অর্থনৈতিকভাবে সংবেদনশীল দেশগুলোয় চাহিদা বৃদ্ধির হার কম। এ কারণেই গত বছরের তুলনায় আমদানি ব্যয় বাড়ার গতিও শ্লথ।
এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমতে পারে। নিট আমদানিকারক উন্নয়নশীল দেশগুলোয় আমদানি ব্যয় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কমতে পারে। তবে অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোয় খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়ছে লাফিয়ে। উভয় অর্থনীতির দেশগুলোয় আমদানি কমে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিষয়টি দেশগুলোর ক্রয় সক্ষমতা কমে যাওয়ার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।