অন্যদিকে, ভোমরা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি পণ্য আমদানি-রফতানিতে বৈষম্যের কারণেই সরকারের রাজস্ব ঘাটতি যাচ্ছে। ভোমরা পূর্ণাঙ্গ বন্দরের সুবিধা দেয়া হলে সরকারের রাজস্ব অনেকাংশে বাড়ত বলে জানান তারা।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ভোমরা স্থলবন্দরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১ হাজার ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জুলাই-জুন পর্যন্ত এ বন্দরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৩১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ৩৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের ঘাটতির তুলনায় ১৮২ কোটি টাকা বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২১২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে মার্চ মাসে। ওই মাসে ৭৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া জুলাইয়ে ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ, আগস্টে ৫৫ কোটি ৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৫৪ কোটি ৬০ লাখ, অক্টোবরে ৪০ কোটি ৯৫ লাখ, নভেম্বরে ৪২ কোটি ৭ লাখ, ডিসেম্বরে ৩৯ কোটি ৯১ লাখ, জানুয়ারিতে ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৫৭ কোটি ৪৭ লাখ, এপ্রিলে ৫৬ কোটি ৬ লাখ, মে মাসে ৬৫ কোটি ৪৯ লাখ ও জুনে ৫৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজি নওশাদ দিলওয়ার রাজু বলেন, ‘সব ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানিতে খুবই সম্ভাবনাময় ভোমরা স্থলবন্দর। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী নামে খ্যাত কলকাতার দূরত্ব দেশের অন্য সব বন্দরের তুলনায় অনেক কম। যোগাযোগ ব্যবস্থাও যথেষ্ট ভালো। এ বন্দরে পণ্য বা যানজট থাকে না। তার পরও ব্যবসায়ীরা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর মূল কারণ হচ্ছে দেশের অন্যান্য বন্দরে পণ্য আমদানিতে যেসব সুযোগ-সুবিধা ব্যবসায়ীদের দেয়া হয় তার কিছুই পায় না ভোমরা বন্দরে। তাছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপান্তর করার পরও এ বন্দরে সব পণ্য আমদানি করতে দেয়া হয় না ব্যবসায়ীদের। ফলে ব্যবসায়ীরা যেখানে ভালো সুবিধা পাবেন সেখানেই তো যাবেন। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয়ও ক্রমাম্বয়ে কমে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এ বন্দরে অবিলম্বে সব ধরনের বৈষম্য দূর করা হোক। ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদামাফিক পণ্য আমদানি করতে পারলে সরকার যেমন লাভবান হবে, তেমনি বাণিজ্যে আরো প্রসার ঘটবে এ বন্দরে।’
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বে থাকা কাস্টমস ডেপুটি সহকারী কমিশনার নেয়ামুল হাসান রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি ডলার সংকট ও ব্যাংকে এলসি জটিলতার কারণেই মূলত বিদায়ী অর্থবছরে এত বেশি পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতি পড়েছে। ব্যবসায়ীরা ডলার সংকটে পড়ে ঠিকমতো এলসি খুলতে পারত না। ফলে আমদানি-রফতানি কমছে এবং সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পড়েছে।