আজ (বুধবার) দুপুরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের একটা বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। আজ আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশকে উন্নত করতে চেয়েছিলেন, তার সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ২১ বছর পর সরকার গঠন করার সুযোগ পাই আমরা। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনী, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যাতে উন্নত হয় তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ আমি হাতে নিয়েছিলাম। আমার লক্ষ্য ছিল, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। কারণ শান্তি রক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করে, পুলিশ বাহিনী কাজ করে, তারা যেন অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমান তালে চলতে পারে, কোনোভাবেই যেন পিছিয়ে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই।
তিনি আরও বলেন, সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রতিটি বাহিনী সাধারণ মানুষের পাশে আছে। শুধু দেশে নয় শান্তিরক্ষা মিশনও যারা কাজ করে তাদের মাঝে সবচেয়ে মানবিক গুণ হলো, যে দেশে তারা যায় তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে স্থানীয় মানুষের সেবা দিয়ে থাকে। সেজন্য প্রত্যেকের কাছে একটা মর্যাদা পায়। আমি খুব গর্ববোধ করি, কারণ যে দেশে আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী কাজ করে সে দেশের সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান যখন প্রশংসা করে তখন গর্ববোধ হয়। আমরা সম্মান পাচ্ছি এটাকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় দেশ যেন অন্তত এক ধাপ এগিয়ে যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। সেজন্য আমি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাই। আজকের বাংলাদেশ আমাদের সেই রূপকল্প বাস্তবায়ন করে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালন করছি তখন কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার প্রিয় মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি পেশাদার, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি গড়ে তোলেন। তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করি আমরা। ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি', ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং' এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ' প্রতিষ্ঠা করি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালে ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮.৭ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের দিকে ধাবিত হচ্ছি। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের নিজেদের অর্থে বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও মর্যাদা বহুলাংশে বেড়েছে।