কোনো দেশ ডেঙ্গু পুরোপুরি নির্মূল করতে পারেনি জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, এই কাজ ‘সম্ভব নয়।’
হাসপাতালগুলো যখন রোগীতে ঠাসা, রাজধানী ও বড় শহর ছাড়িয়ে ডেঙ্গু যখন সারা দেশের রোগে পরিণত হয়েছে, সে সময় মেয়র ডেঙ্গু ‘নিয়ন্ত্রণে রাখার’ দাবিও করেছেন।
বুধবার হাতিরঝিলে পানি নিষ্কাশন যন্ত্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন তাপস।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, ডেঙ্গু নির্মূল কেউ করতে পারবে না। কোনো দেশ করতে পারেনি। আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা যদি উন্নত দেশের সাথে যদি তথ্য ও পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন অন্যান্য দেশের তুলনায় এখন পর্যন্ত আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। যদিও আমাদের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশার বিস্তৃতিও অন্যান্য দেশের তুলনায় নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করেন তাপস। তিনি বলেন, যদিও বৃষ্টির পরিমাণ অন্য দেশের তুলনায় বেশি হয়েছে, তারপরও আমরা সেটা করতে পেরেছি।
“বুঝতে হবে এটা সামগ্রিক জলবায়ু, সামগ্রিক আবহাওয়া ও ভৌগলিক অবস্থান ও পরিবেশের কারণে এইডিস আমাদের দেশে বিস্তৃত হয়েছে প্রজনন করে। সেটাকে রোধ করতে হলে সকলকে মিলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”
এ বছর বর্ষা শুরুর আগেই মারাত্মক রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। বছরের সাত মাস না যেতেই সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরও নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন মেয়র তাপস। তিনি বলেন, চিকিৎসা সেবার মান পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। একজন রোগী যেন শঙ্কাজনক অবস্থায় না যায়, এ জন্য প্রাক (আগের) যে কার্যক্রমগুলো… চিকিৎসা সেবা, এটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে মৃত্যুর হার কমাতে পারব।
কোন বিবেচনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
বর্ষা আসতে না আসতেই এত রোগীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে- মেয়রের দিকে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন একজন গণমাধ্যমকর্মী।
জবাব আসে, একটি হল মৌসুমের আগে স্বাভাবিকভাবে কিছু রোগী হওয়া। আরেকটি হল মৌসুমের সময় হওয়া। মৌসুমের আগে যেটা হয় যদিও সেটা পূর্ণ হিসাবে চলে আসে। কিন্তু আসলটা কিন্তু মৌসুমের মধ্যে কী হচ্ছে সেটা বিষয়।
“এখন মৌসুম তুঙ্গে। জুলাই মাস চলে এসেছে। জুলাই থেকে বৃদ্ধিটা শুরু হয়। অগাস্ট মাসে সবচেয়ে তুঙ্গে যায়। সেপ্টেম্বর মাসে কমে আসে। কিন্তু গত বছর আমরা পরিবর্তন দেখেছি। চরিত্রে পরিবর্তন দেখেছি। অগাস্ট মাসে কেবল বৃদ্ধি পায়নি। সেপ্টেম্বর আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কমা শুরু হয়েছে নভেম্বর গিয়ে।”
এবার ডেঙ্গু আগেই চলে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে সময় তীব্র দাবদাহ ছিল সেই সময়েও ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। সেই সময় এটা হওয়ার কথা নয়। আমরা এগুলোকে আমলে নিয়ে কার্যক্রম বিস্তৃত করেছি। ২০২১ সালে আমরা দুই মাসের কার্যক্রম নিয়েছিলাম। এখন আমরা চার মাসের কার্যক্রম নিয়েছি। আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। কার্যক্রমও বৃদ্ধি করছি।
ঢাকা দক্ষিণে রোগী বেশি নিয়ে যে ব্যাখ্যা
ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকা থেকে বেশি ডেঙ্গু রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে তাপস বলেন, ঢাকার উত্তর অঞ্চলটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। সেখানে বনানী গুলশানের সঙ্গে তুলনা করে মিলালে সেটা হবে না। বারিধারা সঙ্গে যদি মেলান হবে না। সেখানে উত্তরা রয়েছে, মিরপুর রয়েছে। এগুলোতে পরিকল্পিত নগরায়ন হয়েছে। আমাদের এখানে পরিকল্পিত নগরায়ন কম হয়েছে। এখানে জনসংখ্যা বেশি, ভার বেশি।“আমাদের এখানে ছোটখাটো পরিবেশ স্থাপনা বেশি। প্রতিকূলতা বেশি। সেই প্রতিকূলতা নিয়েই আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হচ্ছি।”
এসব ‘প্রতিকূলতা’ বিবেচনায় নিয়েই কর্মপরিকল্পনা সাজানোর কথা বলেন মেয়র। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে সকালে সাতজন, বিকেলে ছয়জন নিয়োজিত করেছি। এর জন্য যে পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োজন, সে পরিমাণ কীটনাশক তাদের দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ যান ও যন্ত্রপাতি দরকার সে পরিমাণ যন্ত্র তাদের দেওয়া হয়েছে। সে পরিমাণ নিবিড় তদারকি আমরা করছি।
“জরিপের ফলাফল আসার আগেই গতকাল থেকে চিরুনি অভিযান শুরু করেছি। আমাদের অবস্থান, আমাদের পারিপার্শ্বিকতা এ সব আমলে নিয়েই আমরা আমাদের কার্যক্রম সাজিয়েছি। কারও সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা নাই। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করতে চাই।”
লার্ভার কথা জানালে ১৫ মিনিটে ধ্বংস
কোথাও এইডিস মশার লার্ভা থাকলে বা থাকতে পারে এমন ধারণা করলে সিটি কর্পোরেশনকে জানানোর অনুরোধও করেন মেয়র তাপস। নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, ১৫ মিনিটের মধ্যে তাদের কর্মীরা সেই লার্ভা ধ্বংস করে দিতে পারবে।
আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন, পানি কোথাও জমতে দেবেন না। পানির উৎস ধ্বংস করতে পারলে ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্ত হতে পারব”, নগরবাসীর প্রতি এই বার্তা দেন তিনি।
অর্থসংবাদ/এসএম