ক্রেতাদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে বাজার তদারক না করায় নানা অজুহাতে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়িয়েছে অসাধুব্যবসায়ীরা। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুতে দামের পার্থক্য ১৫-১৯ টাকা ছাড়িয়েছে। খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের দাবি বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাড়ছে আলুর দাম। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এখনো পর্যাপ্ত আলুর মজুদ রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ৬৭টি হিমাগারের মধ্যে বর্তমানে সচল ৬৩টি হিমাগারে মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৩ টন আলু। এর মধ্যে খাবার আলু মজুদ রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫২ টন। আর বীজ আলুর মজুদ রয়েছে ৭৭ হাজার ৫৮১ টন। খুচরা বাজারে কয়েক দফা মূল্যবৃদ্ধির পর তিন সপ্তাহে হিমাগার থেকে বাজারজাত হয়েছে ১৮ হাজার ১৫৮ টন।
অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছর মুন্সিগঞ্জে হেক্টরপ্রতি আলু উৎপাদনে গড়ে খরচ হয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ৩০ দশমিক ৭৫ টন অথবা ৩০ হাজার ৭৫০ কেজি। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদন ও পরিবহন খরচসহ সংরক্ষণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজিতে ১১-১৩ টাকা। বর্তমানে হিমাগারের মজুদকৃত এসব আলু প্রায় এক গুণ বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪১-৪৬ টাকা পর্যন্ত। সরজমিনে সদর উপজেলার মুক্তারপুর পুরনো ফেরিঘাট ও চর মুক্তারপুর, বিক্রমপুর মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ, রিভারভিউ, কদমরসুল, এলাইট, নিপ্পন, দেওয়ান আইস, নিসান ও টঙ্গীবাড়ী কোল্ড স্টোরেজসহ আরো বেশ কয়েকটি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ আলুর প্রতিদিনের পাইকারি বেচাকেনা অব্যাহত রয়েছে।
হিমাগারের ভেতরে সংরক্ষিত আলুর বাছাই প্রক্রিয়া শেষে বস্তায় রাখছেন শ্রমিকরা। হিমাগারগুলোয় পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২২-২৬ টাকা। এতে ৫০ কেজি ওজনের প্রতিটি বস্তার দাম পড়ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
স্থানীয় একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উৎপাদিত আলুর প্রায় ৯৩ শতাংশ কৃষকরা বিক্রি করে দিয়েছেন ব্যবসায়ী বা ব্যাপারীদের কাছে। তবে এখনো কিছুসংখ্যক কৃষকের আলু মজুদ রয়েছে হিমাগারে। বাকি সবটুকুই ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে বাজারে আলুর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে।
স্বাভাবিকের চেয়েও দ্বিগুণ মূল্যে খুচরা পর্যায়ে আলু কিনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। তবু কয়েক দফা আলুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে নানা অজুহাত দিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। মুন্সিগঞ্জ কাঁচাবাজারের শাহ আলম ঢালী নামের এক খুচরা আলু বিক্রেতা বলেন, ‘আমি ২৫-৩০ বছর ধরে কাঁচামালের ব্যবসা করে আসছি। কাঁচামালের দাম প্রতিদিন ওঠানামা করবে এটা স্বাভাবিক। আর আমাদের তো কোল্ড স্টোরেজ কিংবা হিমাগারে মজুদ রাখা পাইকারি আলু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি আলু ক্রয়ের সুযোগ নেই, তারা এসব বিক্রি করে ঢাকার বড় বড় কাঁচামালের আড়তদারদের কাছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আলু রোপণ মৌসুম থেকে শুরু করে উত্তোলন পর্যন্ত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। তবে কৃষকদের আলু বিক্রি করে দেয়ার পর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই কৃষি বিভাগের।’
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, ভোক্তা পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ পেলেই নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪৫ ধারায় কোনো লিখিত অভিযোগ পেলেই বাজারগুলোয় অভিযান চালিয়ে নেয়া হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থা।’