শেয়ারবাজারে গুজবের হাতিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া

শেয়ারবাজারে গুজবের হাতিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া
‘কারসাজি’ শব্দটি শেয়ারবাজারের জন্য নতুন কিছু নয়। হরহামেশাই দেশের পুঁজিবাজারেও বিভিন্ন শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়। সাধারণত বড় কোন চক্র এসব কারসাজিতে জড়িত থাকে। কারসাজির জন্য যেসব কোম্পানির শেয়ারকে বেছে নেওয়া হয়, সেগুলো নিয়ে বিভিন্নভাবে গুজব ছড়ায় এসব চক্র। এক্ষেত্রে কারসাজি চক্রের অপপ্রচারের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠে সোশ্যাল মিডিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজে কারসাজির জন্য বাছাই করা শেয়ারগুলো নিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে এসব গ্রুপ-পেইজে ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টাও করা হয়। এসব ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হলেও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় সংস্থাটি। তবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে যেসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে, তার সবগুলো নিয়েই বানোয়াট তথ্য প্রচার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপকে এক্ষেত্রে হাঁতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে কারসাজি চক্রগুলো। রয়েছে বেশকিছু পেইজও। এসব গ্রুপ-পেইজে অতিরঞ্জিত ও বানোয়াট তথ্যের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এতে দেশের শেয়ারবাজারে বেশকিছু শেয়ার অতিমূল্যায়িতও হয়েছে। আর লাভবান হয়েছেন পর্দার আড়ালে থাকা বিভিন্ন কারসাজি চক্র।



জানা গেছে, শেয়ারবাজারকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশকিছু পেইজ ও গ্রুপ খোলা হয়েছে। যার বেশিরভাগই বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ‘ডিএসই শেয়ার আলো’, ‘ডিএসসি গেমলিং আইটেম’, ‘শেয়ারবাজার’, ‘শেয়ার মার্কেট সুপার স্টার’সহ ফেসবুকে প্রায় অর্ধশত গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপে বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে বানোয়াট তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। কখনো আবার বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে বেশকিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়। এসব অ্যাকাউন্টের প্রোফাইলে ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের’ কর্মরত বলেও উল্লেখ করা হয়। এমন একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হচ্ছে Suraiya Somi Dse (সুরাইয়া সুমি)। তবে ডিএসইতে এই নামের কোন কর্মকর্তা নেই বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। অথচ এই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হচ্ছে অতিরঞ্জিত সব তথ্য। অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজের মালিকানায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি- এমন তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপ-পেইজে। নামে শেষে ডিএসই এবং প্রোফাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যুক্ত করায় এসব ভুয়া আইডির পোষ্টে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও ডিএসই ইনভেস্টর ক্লাব নামের একটি ফেইসবুক পেইজ থেকে সম্প্রতি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য পোস্ট করা হয়েছে। পোষ্টে বলা হয়েছে, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের মালিকানায় আসছে ওয়ালটন ও ইউনিলিভার। অথচ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশিত হয়নি।



ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, সমতা লেদার, জুট স্পিনার্সসহ সম্প্রতি যত কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়েছে তার পেছনে অন্যতম কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়ানো। গত বছরের জুন পর্যন্ত ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারদর ছিল ১০০ টাকার নিচে। তবে জুলাই থেকে এ কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। ২৭ অক্টোবর শেয়ারটি সর্বোচ্চ ৯৭৩ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ১ হাজার শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায় ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। সি পার্লের শেয়ারও জুলাই পর্যন্ত ৫০ টাকার নিচে ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে এ শেয়ারটির দামও ৩২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএসইসির একটি পেইজ আছে। ওই পেইজ থেকে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। এর বাইরে অন্য গ্রুপ বা পেইজে যেসব তথ্য দেওয়া হয়, সেগুলো বিভ্রান্তিকর, গুজব। কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে থাকে। আর ফেসবুক গ্রুপ পেইজে ঘুরিয়ে পেঁছিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়। ইতিমধ্যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মামলা এবং গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়া উচিৎ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিএসইর নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করলেও আমরা বিষয়টি সেভাবে ভেবে দেখিনি। তবে আপনি যেসব বিষয়ে অবগত করেছেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট যে কোন তথ্য আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকি। ডিএসইর ফেসবুক পেইজ থাকলেও সেটি অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। অন্য কোন গ্রুপ বা পেইজকে তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা এখন বিষয়টি দেখবো।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ বিষয়ে অর্থসংবাদকে বলেন, গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিএসইসি সবসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি কমিশনের দায়ের করা মামলায় একজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশন। বিএসইসি সবসময়ই সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণ করছে। ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, কমিশন প্রয়োজনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনবে।

অর্থসংবাদ/ওয়ালিদ


আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত