বছরখানেক আগে দেশটির শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে হতো। মানুষ কাজ করতেন ঘর থেকে। কিন্তু বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে প্রায়ই সেটাও সম্ভব হতো না। কারণ দিনের ১২-১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না তখন। খাদ্য-ওষুধ থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি ছিল বাজারে। তাতে সংকট আরো প্রকট হয়েছে। তীব্র গরমে মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করতে হতো। সে কারণে অন্তত ১৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিল বয়স্ক মানুষ।
আজ এক বছর পর খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ঘাটতি নেই বাজারে; অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, কারখানা সবই খোলা। রাস্তায় চলছে গণপরিবহন। মানুষ রেস্তোরাঁয় যাচ্ছে, বিশেষ করে উচ্চবিত্তদের জন্য তৈরি রেস্তোরাঁগুলোয় মানুষের ভিড় লেগে আছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মূল উৎস পর্যটন খাতও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। খাতটিতে গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে এর মধ্যে। দেশটির শীর্ষ স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সি জেটউইংস সিম্ফনির প্রধান নির্বাহী হিরন কুরে বলেন, ‘আমাদের খাত যেন জাদুর মতো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, অথচ গত বছর আমরা জানতাম না, দেশ কোথায় যাবে’।
তার পরও শ্রীলংকার অর্থনীতিতে ঝুঁকির জায়গা আছে। দেশী ও বিদেশী মিলে মোট ৮ হাজার কোটি ডলারের বেশি ঋণ আছে কাঁধে। গত বছর সংকট এত গভীর ছিল যে দেশটি বিদেশী ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়। শ্রীলংকা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আইএমএফের ঋণের জন্য অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। তারই অংশ হিসেবে আইএমএফ এখন ঋণ পরিশোধের শর্ত পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ উভয় ঋণের ক্ষেত্রেই।
তবে মূল নজরটা এখন ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বিদেশী ঋণ পুনর্গঠনের দিকে। এর মধ্যে আছে চীনের কাছ থেকে নেয়া ৭০০ কোটি ডলার। গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের পর রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন। তিনি আইএমএফ থেকে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ নিশ্চিত করেন। কিন্তু অর্থের পাশাপাশি নানা নীতিমালাও গৃহীত হয়। দেশটির প্রধান লক্ষ্যই ছিল ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিদেশী ঋণ পরিশোধ। এর মধ্যে চীন থেকেই এসেছে ৭০০ কোটি ডলার। দেশটির মোট ঋণের ৫০ শতাংশই অভ্যন্তরীণ ঋণ। এখন বাজারে অনেক পণ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের মূল্য নাগালের বাইরে। প্রায় অর্ধেক শ্রীলংকান তাদের আয়ের ৭০ শতাংশ ব্যয় করে খাদ্যের পেছনে। দৈনন্দিন পণ্য থেকে ভর্তুকি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আরোপ করা হয়েছে ৩৬ শতাংশ আয়কর। বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, শ্রীলংকার পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে আরো সময়ের প্রয়োজন। সাংবিধানিক আইনজীবী ভবানি ফনসেকা দাবি করেছেন, ‘বল প্রয়োগের চিন্তা বাদ দিয়ে এ সময়ে অর্থনীতি পুনর্গঠনে কাজ করা উচিত।