সূত্র মতে, রবিবার ডিএসইতে বীমা খাতের ৫৩টি কোম্পানি শেয়ার লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪৩টির শেয়ারদরই আজ কমেছে। শতাংশ হিসেবে এ খাতের ৮১ দশমিক ১৩ শতাংশ কোম্পানি শেয়ারদর হারিয়েছে। অপরদিকে দর বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৫টি কোম্পানির। বাকি ৫ কোম্পানির শেয়ারদর আজ অপরিবর্তিত ছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন ব্যাংকাস্যুরেন্স অনুমোদনের পর সেটি স্থগিতের দাবি ওঠায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কম দামেই বীমা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত বুধবার (১৯ জুলাই) ব্যাংকের মাধ্যমে বীমা পলিসি বিক্রির (ব্যাংকাস্যুরেন্স) প্রস্তাবে সম্মতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ খবরে পরের দিন (বৃহস্পতিবার) দেশের শেয়ারবাজারে বীমা কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ধুম পড়ে। সেদিন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কারণে বীমা খাতের ৪৩টি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে একইদিন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন ‘ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স’ প্রবর্তনের গেজেট নোটিফিকেশন সাময়িকভাবে স্থগিত করার দাবি জানিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) কাছে একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে বিআইএ জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ব্যাংকাস্যুরেন্স স্থগিতের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। মূলত এই খবরেই রবিবার দেশের শেয়ারবাজারে বীমা খাতের বেশিরভাগ শেয়ারের পতন হয়েছে।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে শেয়ারবাজারে বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদরের কারণ জানতে চাইলেও প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছিল দর বৃদ্ধির পেছনে অপ্রকাশিত কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই। সূত্র জানায়, রুপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ফু-ওয়াং ফুডস এবং অলিম্পিক এক্সেসরিজের শেয়ারদর গত কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে রবিবার এসব কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। অতিমূল্যায়িত হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর হঠাৎ করে কমে যাওয়াও শেয়ারবাজারে পতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, রবিবার এক্সচেঞ্জটির প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ২৩ দশমিক ০৪ পয়েন্ট হারিয়েছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৪২ পয়েন্টে। এছাড়াও বাছাই করা কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএস ৩০’ ২৪ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট কমেছে। আর শরীয়াহ ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসই এস’ কমেছে ৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট। সূচকের পতনের সঙ্গে আজ ডিএসইতে লেনদেনও কমেছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজারে ৭৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আল আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, পেইড আপ ক্যাপিটাল বেশি এমন শেয়ারগুলো ফ্লোর প্রাইসে আটকা থাকলেও বাজারে কিছু শেয়ার আগে অতিমূল্যায়িত হয়েছে। আজ আবার এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য সংশোধন হয়েছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। এছাড়াও ব্যাংকাস্যুরেন্স স্থগিত করার একটি দাবি উঠেছে বীমা খাতে। এ দাবির প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমেছে। এ দুই কারণে শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে। তবে আজকে পতনের পেছনে বড় দায়ী হচ্ছে বিমা খাত।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, বাজারের পতনের পেছনে বীমা খাত কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। এ খাতে আজ নেগেটিভ প্রেসার ছিল। তবে শুধু বীমা খাতের কারণেই যে বড় পতন হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। আমাদের শেয়ারবাজার গত ৬ মাসই একই বৃত্তে ঘুরছে। ৬ মাস ধরেই সূচক ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টের আশেপাশেই আছে।