উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সবচেয়ে সঙিন। মূল্যস্ফীতি থেকে শুরু করে প্রবৃদ্ধি- প্রায় সব সূচকেই পিছিয়ে আছে দেশটি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকার কারণে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে এখন নীতি সুদহার কমানোর চিন্তা করাই সম্ভব হচ্ছে না।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের মতো ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও এক বছরের বেশি সময় ধরে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে। এই যুদ্ধে ফেড সফলতা পেলেও ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এখনো সাফল্য পায়নি। দেশটিতে গত জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৯, অথচ একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তা ছিল ৫ দশমিক ৫, আর যুক্তরাষ্ট্রে ৩ শতাংশ।
উন্নত দেশগুলো গত দেড় বছরে যে ধরনের বিপদের মুখে পড়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বাজে ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করছে যুক্তরাজ্য। মহামারির পর দেশটিতে শুরু হয়েছে শ্রমিকসংকট, সেই সঙ্গে গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি-এ দুই কারণে দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো যুক্তরাজ্য বিপুল পরিমাণে জ্বালানি কেনে। গ্যাসের পাইকারি দাম কমলেও মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে তার ছাপ পড়তে অনেক সময় লাগছে।
জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের মূল্যস্ফীতিও যুক্তরাজ্যে অনেক বেশি। কোর ইনফ্লেশন সূচক হিসাবে পরিচিত এই সূচক এখন গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এ ছাড়া মহামারির সময় মানুষের যে সঞ্চয় হয়েছে এবং বেতন বৃদ্ধির কারণেও কিছু মানুষের হাতে ব্যয় করার মতো যে অর্থ আছে, সেটাও তাঁরা এখন ব্যয় করছেন।
প্রবৃদ্ধির হার
গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে অনেক বিশ্লেষকই বলেছিলেন, চলতি বছর যুক্তরাজ্যসহ অনেক উন্নত দেশ মন্দার কবলে পড়বে। যুক্তরাজ্য অবশ্য এখনো মন্দা এড়িয়ে চলছে। তবে উচ্চ নীতি সুদহারের কারণে চলতি বছর যুক্তরাজ্যও মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি অর্জনে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে যুক্তরাজ্য ও জার্মানি।
মহামারির আগের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, কানাডার হয়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, ইতালির ২ দশমিক ৫ ও জাপানের ১ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ যুক্তরাজ্য ও জার্মানির ক্ষেত্রে অর্থনীতির সংকোচন হয়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, মহামারির আগের সময়ের তুলনায় এখনো তাদের প্রবৃদ্ধি হয়নি।
বেকারত্ব
এদিকে ব্রেক্সিট, কোভিড ও উচ্চ নীতি সুদহারের নানামুখী আঘাত সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজার বেশ ভালোই করছে। দেশটিতে বেকারত্ব ৪ শতাংশ-এই হার ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে কম হলেও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি। সে দেশে এই হার ৩ দশমিক ৬।
তবে এই পরিসংখ্যানের ভিন্ন চিত্রও আছে। সেটা হলো, বেকার হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য শ্রমবাজারে সক্রিয় থাকতে হবে, অর্থাৎ কাজ খুঁজতে হবে। যাঁরা চাকরি খোঁজেন না, তাঁরা নিষ্ক্রিয়। যুক্তরাজ্য উন্নত দেশগুলোর বিরল এক দেশ, যেখানে মহামারির আগের সময়ের তুলনায় নিষ্ক্রিয় মানুষের সংখ্যা বেশি; যার অন্যতম কারণ হলো দেশটিতে দীর্ঘ মেয়াদে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। ধনী দেশগুলোর জোট ওইসিডির মতে, শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের দিক থেকে যুক্তরাজ্য সবচেয়ে পিছিয়ে।
এতে অবশ্য শ্রমিকেরা মজুরি বাড়াতে দরদাম বেশি করতে পারছেন। কিন্তু নীত সুদহার বাড়তে থাকলে বেকারত্বের হারও বাড়তে পারে।
করহার কম
এদিকে ওইসিডির সূত্রেই জানা যায়, যুক্তরাজ্যের করভার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম, যদিও তা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাজ্যের করহার এখন ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ; যদিও ২০২৭-২৮ সালে তা ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মধ্যে ফ্রান্সের করহার ৪৫ দশমিক ২, জার্মানির ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের করহার মাত্র ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
অর্থসংবাদ/এসএম