রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। দুর্বল রুবল, কঠোর শ্রমবাজার এবং শক্তিশালী ভোক্তা চাহিদাসহ বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে এ অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তটি এসেছে। খবর রয়টার্স
এক বছরের মধ্যে এই প্রথম রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে পশ্চিমাদের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২০ শতাংশ জরুরি ভিত্তিতে সুদহার বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল। তার পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধীরে ধীরে সুদের হার কমিয়ে আনে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে সুদের হার কমিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিবৃতিতে মধ্যমেয়াদি মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা আরো উল্লেখ করেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি উৎপাদনক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেছে শ্রম সম্পদের সীমিত হওয়ার কারণে।
বর্তমান পরিস্থিতি ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করেছে। চলতি বছর রুবলের অবমূল্যায়ন মূল্যস্ফীতিমুখী ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। যার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির জন্য বছরের শেষের পূর্বাভাসটি ৪ শতাংশ থেকে ৫-৬ দশমিক ৫-এর পরিসরে সংশোধন করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবিষ্যতের আলোচনায় সুদহার আরো বাড়ানোর সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অনেক বিশ্লেষককে বিস্মিত করেছে। এ ঘোষণা আসার আগেই বিশ্লেষকরা আরো বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। যদিও কেউ কেউ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের পূর্বাভাস সংশোধন করেছেন। কারণ মূল্যস্ফীতির তথ্য জুলাইয়ে প্রত্যাশার তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধির জন্য মূলত চাহিদাভিত্তিক কারণগুলোকে দায়ী করেছেন। তিনি অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাজার ও অটোমোবাইল উৎপাদনকে এমন খাত হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন যেখানে চাহিদা সরবরাহের চেয়ে বেশি ছিল। রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দুর্বলতাও মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।
আমদানির উচ্চচাহিদার কারণে রুবল দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার রফতানিও কমেছে। তবে এলভিরা নাবিউলিনা জোর দিয়ে বলেছেন মূল্যস্ফীতির মূল কারণটি হলো অতিরিক্ত চাহিদা, যা অপর্যাপ্ত শ্রমশক্তি ও সরবরাহের সীমাবদ্ধতার কারণে আরো তীব্র হয়েছে।
জুনের শেষের দিকে ভাগনার ভাড়াটে সৈন্যদল সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্টার পরে সম্প্রতি রুবলের ওপর চাপ আরো বেড়েছে। রাশিয়ার অবকাঠামোর ওপর আক্রমণের জন্য ইউক্রেনকে দোষারোপ করা হয়েছে। অপ্রত্যাশিত হারে সুদহার বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবিষ্যতের মুদ্রানীতি নিয়ে বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনার আসন্ন মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ব্যাংকের পূর্বাভাস ও নীতি নির্দেশনা সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলা ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো মূল্যায়নের জন্য বাজারকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সুদহার নির্ধারণের বৈঠকটি আগামী সেপ্টেম্বরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থসংবাদ/এসএম