তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেকর্ড পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে এশিয়ার দেশগুলো। আমদানির পরিমাণ ছিল দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল। আগামী মাসে আমদানি দৈনিক ১৫-১৯ লাখ ব্যারেলে অবস্থান করতে পারে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চের কাছাকাছি। আমদানিকারকদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে আছে জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট বা ডব্লিউটিআই।
জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে দুটি বাজার আদর্শ ডব্লিউটিআই ও দুবাই ক্রুড। এর মধ্যে ডব্লিউটিআই যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে পশ্চিম টেক্সাসে উত্তোলন হয়। আর দুবাই ক্রুড মধ্যপ্রাচ্যে উত্তোলিত হয়। এ দুই বাজার আদর্শের মধ্যে বর্তমানে এশিয়ার পরিশোধন কেন্দ্রগুলোয় দুবাই ক্রুডের পরিবর্তে ডব্লিউটিআইর চাহিদা বেশি। কারণ দামের তারতম্য। বর্তমানে দুবাই ক্রুডের তুলনায় ডব্লিউটিআই ব্যারেলপ্রতি ৫ ডলার ৪০ সেন্ট কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি দুই দফায় এশিয়ার বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সৌদি আরব। বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে এশিয়ার ক্রেতাদের উৎসাহিত করছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক এক ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীন সৌদি আরব থেকে জ্বালানি তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে দেশটি সম্ভাব্য সব বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি তেল কেনার চেষ্টা চালাচ্ছে।’ বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আগামী মাসগুলোয় চীনসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি তেল আমদানি আরো বাড়তে পারে।
বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এনার্জি আসপেক্টস জানায়, তাদের দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল রফতানি বাড়বে। চীন ও জাপান বর্তমানে বিপুল পরিমাণে ডব্লিউটিআই আমদানি করছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ কমছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সাত লাখ ব্যারেল করে মজুদ কমেছে।
এশিয়ার দেশগুলোয় রাশিয়া থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি লক্ষণীয় মাত্রায় কমছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় এ অঞ্চলের ক্রেতারা আমদানিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছেন। ফলে আমদানি কমে দুই বছরের সর্বনিম্নে। খবর অয়েলপ্রাইস ডটকম।
এলএনজি পরিবাহী জাহাজের তথ্য পরিষেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, জুনে এশিয়ার দেশগুলোয় রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ কমেছে, যা ২০২১ সালের আগস্টের পর সর্বনিম্ন।
চীন এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটি রুশ জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ নজিরবিহীন বাড়িয়েছে। মূলত কম দামের কারণে দেশটি থেকে তুলনামূলক বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করছেন চীনের ক্রেতারা। অন্যদিকে রাশিয়াও পশ্চিমা বাজারগুলোর বিকল্প হিসেবে ভারত ও চীনসহ এশিয়ার দেশগুলোকে বেছে নিয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানি বাড়ায় দেশটি থেকে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়েছে চীন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাশিয়ান প্লান্টগুলো থেকে আমদানি লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। এর মধ্যে জুনে আমদানি কমে ১১ মাসের সর্বনিম্নে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইউটিলিটিগুলো বর্তমানে রাশিয়ান এলএনজি আমদানি করছে না। অন্যদিকে জাপানের অন্তত দুটি ইউটিলিটি রাশিয়া থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে হামলার জবাবে রাশিয়ার ওপর বেশ কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা দেশগুলো। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক খাত, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে জ্বালানি তেলের খাতও। গত বছরের শেষ দিকে রুশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। এ বছরের শুরুর দিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় পরিশোধিত পণ্যের ওপর।
তবে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলএনজি রফতানি এখন পর্যন্ত কোনো রকম নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েনি। এরপর ক্রেতারা ভবিষ্যতে কোনো ধরনের পেমেন্ট বা ডেলিভারি-সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে আমদানি কমিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া আমদানিতে বৈচিত্র্য নিয়ে আসাও এর পেছনে অন্যতম কারণ।
অর্থসংবাদ/এসএম