তেল উৎপাদন না করলেও তেল ব্যবসায় শীর্ষে সিঙ্গাপুর

তেল উৎপাদন না করলেও তেল ব্যবসায় শীর্ষে সিঙ্গাপুর
ভূকৌশলগত অবস্থান কাজে লাগিয়ে একটি ছোট দেশ অর্থনীতিতে কতটা এগিয়ে যেতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সিঙ্গাপুর। দেশটিতে প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকলেও তারা এখন উন্নত দেশ। ২০২২ সালে দেশটির মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৬৭ হাজার ডলারের বেশি।

দেশটি তেল উৎপাদন না করলেও তারাই বিশ্বের অন্যতম তেল সরবরাহ কেন্দ্র। দেশটির উন্নতির পেছনে তেলশিল্পের অবদানও অনেক। ২০২২ সালে দেশটির জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনে তেলশিল্পের অবদান ছিল ৫ শতাংশ। তেলশিল্পে কাজ করেন প্রায় এক লাখ মানুষ। তবে সম্প্রতি পরিবেশবান্ধব জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি ও তেল খাতের অস্থিরতার কারণে দেশটির তেলশিল্প কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে।

এমন কোনো বড় বৈশ্বিক তেল কোম্পানি নেই যারা সিঙ্গাপুরে কাজ করে না। এক্সনমবিল, শেল, বিপি, সিঙ্গাপুর পেট্রোলিয়াম কোম্পানি, সেম্বকর্প মেরিন, কেপেল করপোরেশন, পেট্রোচায়না, সিএনওসিসি, সৌদি আরামকো—এরা সবাই সিঙ্গাপুরে আছে।

তেল উৎপাদন না করেও সিঙ্গাপুর কীভাবে তেল সরবরাহ কেন্দ্র হয়ে উঠল, সেটাই অনেকের হয়তো প্রশ্ন। এর উত্তর হচ্ছে তেল পরিশোধন ও পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন। সিঙ্গাপুরে যেসব তেল কোম্পানি কাজ করছে, তাদের দৈনিক তেল পরিশোধন সক্ষমতা দিনে ১৫ লাখ ব্যারেল। ফলে তারা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল পরিশোধন কেন্দ্র। সেই সঙ্গে এক্সনমবিল ও বিপির মতো কোম্পানিগুলো সেখানে অপরিশোধিত তেল শোধনের পর নানা ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্যও উৎপাদন করে, যেমন গ্যাসোলিন, ডিজেল, জেট ফুয়েল ইত্যাদি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব পণ্য সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করে। ফলে তেলশিল্পে সিঙ্গাপুরকে অপ্রাসঙ্গিক করে রাখার সুযোগ নেই।

তেল পরিশোধনের ক্ষেত্রে সম্প্রতি সিঙ্গাপুর কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তার কারণ ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া বড় বড় তেল পরিশোধনাগার নির্মাণ করছে। কিন্তু এই শিল্পে সিঙ্গাপুরের ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা; সেই সঙ্গে তার তেল পরিশোধন সক্ষমতা চাহিদার দ্বিগুণ। পরিশোধের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তারা আগামী কয়েক বছরের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা বার্ষিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায়। প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে সিঙ্গাপুরের পরিশোধনাগারগুলো পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে জাহাজে তেল ভর্তির ক্ষেত্রেও তাদের বন্দর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র। গত কয়েক বছরে তারা বার্ষিক ৪৫ মিলিয়ন বা সাড়ে ৪ কোটি টন তেল বিক্রি করেছে এই উদ্দেশ্যে, যা বিশ্বের সব জাহাজের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে পরিবেশজনিত উদ্বেগের কারণে সিঙ্গাপুর এখন সব জাহাজে তেল দেয় না, দেখেশুনে পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড পূরণ করে তারা এই তেল বিক্রি করছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঠিক মাঝখানে সিঙ্গাপুরের অবস্থান হওয়ায় দেশটি আশপাশের দেশগুলোর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ফলে তেল ব্যবসায় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র সিঙ্গাপুর। তেল ব্যবসার পরিমাণের দিক থেকে সিঙ্গাপুর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের পরে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশ সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে তেল সংগ্রহ করে।

জ্বালানির আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে এলএনজি। বিশাল এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করে এই ব্যবসায়ও সিঙ্গাপুর বড় জায়গা দখল করেছে। বিদ্যমান এই কেন্দ্র সম্প্রসারণে তারা ৫০ কোটি ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা ভবিষ্যতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবসা ও জাহাজীকরণের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এলএনজি টার্মিনালের সম্প্রসারণ শেষ হলে সিঙ্গাপুর বছরে ৯০ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ ও গ্রহণ করতে পারবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এলএনজি জাহাজীকরণের ক্ষেত্রেও সিঙ্গাপুর বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতেও অগ্রণী ভূমিকা পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সিঙ্গাপুর। ২০২১ সালে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। সমুদ্রতীরবর্তী স্থাপিত এই কেন্দ্রে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, তা দিয়ে দেশটির পাঁচটি পানি শোধনাগার চালানো যাবে। ১ লাখ ২২ হাজার প্যানেলের প্রকল্পটি ৪৫টি ফুটবল মাঠের সমান।

সামগ্রিকভাবে সিঙ্গাপুরের সরকারি নীতি অত্যন্ত ব্যবসাবান্ধব। তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক নেওয়ার কারণে সিঙ্গাপুরের সুনাম দুনিয়াজোড়া। এ ছাড়া অনেক খাতে তারা কর নেয় না। লভ্যাংশ, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদ, উপহার-উপঢৌকন পাওয়া—কোনো কিছুর ওপর সেখানে শুল্ক দিতে হয় না। সোনা-রুপার কেনাবেচাও কর নেই। এই বাধাহীন লেনদেনের কারণে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সেটাই দেশটিকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামির শঙ্কা
ফিলিস্তিনি বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চায় ইসরায়েল
গাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প, যুদ্ধবিরতিতে ২০ প্রস্তাব
যুক্তরাষ্ট্রে এবার ওষুধ রপ্তানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক বসালেন ট্রাম্প
থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে নিহত ৩৯
পাকিস্তানে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাত
উত্তর কোরিয়া ও মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বড় নিষেধাজ্ঞা
ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না: ট্রাম্প
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপলো ভেনেজুয়েলা
৭৬% মার্কিনি মনে করেন, ট্রাম্প নোবেল পাওয়ার যোগ্য না