মাস্টার ফিডের মৃত পরিচালকের শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ এমডির বিরুদ্ধে

মাস্টার ফিডের মৃত পরিচালকের শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ এমডির বিরুদ্ধে
শেয়ারবাজারের এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের এক মৃত পরিচালকের শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মৃত পরিচালকের স্ত্রী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিজ লিমিটেডের সিইও’র কাছে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, কবির হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে ইতিমধ্যে কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ফাস্ট ক্যাপিটালের সিইও’র কাছে দেওয়া চিঠিতে উম্মে হাবিবা বলেন, আমার স্বামী মৃত রফিকুল ইসলাম গত বছরের (২০২২ সাল) ১৫ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন। তিনি মাস্টার ফিডের পরিচালক ছিলেন। তাঁর কাছে কোম্পানির ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার ছিল, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৯ কোটি টাকা। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমি স্বাভাবিকভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। এমন অবস্থায় মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবির হোসেন ও আমার দেবর মো. তৌহিদুল আলম আমার মৃত স্বামীর কোম্পানীর কিছু কাগজপত্র আমার নামে ট্রান্সফার করতে হবে বলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আমি সরল বিশ্বাসে কাগজপত্রাদিতে স্বাক্ষর করে দেই। স্বাক্ষরকৃত কাগজপত্রাদি দিয়ে মো. কবির হোসেন গং ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজে একটি বিও এ্যাকাউন্ট খোলে। গত ১৬ জুলাই কবির হোসেনের সাথে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের মতিঝিল অফিসে গিয়ে জানতে পারি যে, আমার নামে একটি বিও এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারি আমার দেবর ও কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক যখন আমাকে দিয়ে মাস্টার এগ্রোটেকের অন্যান্য কাগজপত্রাদি স্বাক্ষর করিয়েছে ঠিক তখনই এই বিও হিসাবের কাগজপত্রাদিও আমাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিল। বিও হিসাব নং: ১২০৪৪৩০০৭৫৮৭৪৯৪৯।

অভিযোগে উম্মে হাবিবা বলেন, পত্রিকা পড়ে জানতে পারি, আমার মৃত স্বামী রফিকুল আলমের নামে বরাদ্দকৃত আনুমানিক নয় কোটি টাকার শেয়ার আত্নসাতের ষড়যন্ত্র চলছে। আমি জানতে পারি যে, বিও হিসাব খোলার পূর্বে তারা আমার স্বাক্ষর জাল করে সাউথইস্ট ব্যাংকের মালিবাগ শাখায় একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলে । পরবর্তীতে বিও এ্যাকাউন্ট ওপেন করার পর উক্ত বিও তে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার ট্রান্সফার করে। শেয়ার বিক্রি করে তারা ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা সাউথ ইস্ট ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে যায়, যা সম্পূর্ণভাবে আমার অজানা ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, আমার বিও এ্যাকাউন্টের পাওয়ার অব এ্যাটর্নী হিসেবে মো. আবুল বাশার এবং নমিনী হিসেবে পেয়ার উদ্দিনকে দেখানো হয়েছে, তাদের কাউকেই আমি চিনিনা। বর্তমানে আমার বিও হিসাবে শেয়ার এবং ব্যালেন্স সহ মোট প্রায় ১ কোটি টাকা আছে।

চিঠিতে প্রাপ্য টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইওর কাছে আবেদন করেছেন উম্মে হাবিবা।

এদিকে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইও কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানেও অভিযোগকারী হিসেবে উম্মে হাবিবার নাম রয়েছে। মূলত মাস্টার ফিডের মৃত পরিচালক রফিকুল আলমের স্ত্রী উম্মে হাবিবার পরিচয় নিয়েই ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। একই নামে বিএসইসি এবং ফার্স্ট ক্যাপিটালে অভিযোগ করাই ধূম্রজাল সৃষ্টির মূল কারণ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও কাউসার আল মামুন অর্থসংবাদকে বলেন, উম্মে হাবিবার পাসপোর্ট, নিকাহনামা দেখে আমি তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। উম্মে হাবিবার আগের স্বামী ছিলেন মোকাদ্দেম হোসাইন। তাদের তালাকের কাগজপত্র আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তীতে তিনিই মৃত রফিকুল ইসলামকে বিয়ে করেন। উম্মে হাবিবাই রফিকুল ইসলামের শেয়ারের উত্তরাধিকারী। এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে প্রকৃত মালিককে শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আমার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগকারী উম্মে হাবিবা জানিয়েছন তিনি অভিযোগ করেননি। তাঁর নাম ব্যবহার করে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন চক্র এ অভিযোগ দিয়েছে।

কাউসার আল মামুন আরও বলেন, শীঘ্রই আমি মাস্টার ফিডের কবির হোসেন চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করবো। সেখানে মৃত রফিকুল আলমের স্ত্রী উম্মে হাবিবাও উপস্থিত থাকবেন। তখন আপনারা সাংবাদিকরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবেন।

এর আগে উম্মে হাবিবার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে অভিযোগ দিয়েছিলেন ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও কাউসার আল মামুন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মাস্টার ফিডের এমডি একজন নারী ও কয়েকজন লোকসহ অফিসে আসেন। মুখমন্ডল ঢাকা ওই মহিলাকে উম্মে হাবিবা দাবি করেন কবির হোসাইন। বিও হিসাবে দেওয়া তাঁর (উম্মে হাবিবা) পেশা ও ঠিকানা জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে মিল নেই। এছাড়াও ফার্স্ট ক্যাপিটালে দাখিলকৃত হাবিবার পাসপোর্টে তার স্বামীর নাম মো. মোকাদ্দেম হোসাইন উল্লেখ রয়েছে।

তবে মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণই মিথ্যা ও বানোয়াট।


আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত