আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। কমিশন মনে করছে, পুঁজিবাজারে এনআরবি ও বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুব কম। কাজেই এখন এই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতিশীলতাও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। বর্তমান পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় যে বেনেফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট (বিও) রয়েছে, তার মাত্র ৬ শতাংশ এনআরবি ও বিদেশিদের। আর প্রায় ৯৪ শতাংশই দেশীয় বিনিয়োগকারীর, যার মধ্যে ব্যক্তিগত অ্যকাউন্টই বেশি।
অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে রোড শোতে দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হচ্ছে। বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেখানে প্রবাসীরা কীভাবে পুঁজিবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবে তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হয়।
এই আয়োজনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মূলত কয়েকটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে আছে- বাংলাদেশ উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। গত দশ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অগ্রগতি, অভ্যন্তরীণ বাজার বড়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে শ্রমের মূল্য কম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো এবং বিনিয়োগ করলে মুনাফা সহজে দেশে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর আগে দেশের বাইরে দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রে, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কাতার ও জাপানে সফলতার সঙ্গে রোড শো সম্পন্ন করেছে বিএসইসি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ২৩ আগস্ট দক্ষিন আফ্রিকায় এবং ২৮ আগস্ট মরিসাসে এবং আগামী অক্টোবরে ইউরোপের বিনিয়োগ আকৃষ্টে ফ্রান্স, জার্মান এবং বেলজিয়ামে রোড শো করতে যাচ্ছে সরকার।
সূত্র জানিয়েছে, এবারের রোড শো’তে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআই’র বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া, দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ারবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হবে।
কমিশন মনে করে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির যে অর্জন ও সম্ভাবনা আছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। যে কারণে আমাদের দেশে সেভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণে এ ধরনের রোড শো বড় ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, কমিশনের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির বিষয়টি রোড শোর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছেন এটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতি এর সুফল পাবে।
সিডিবিএলের ভাইস চেয়ারম্যান একেএম নূরুল ফজল বুলবুল বলেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে যে কয়টি রোড শো হয়েছে সেগুলো খুবই ভালো হয়েছে। এতে নিঃসন্দেহে দেশের ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দেশ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানে না। রোড শোর মাধ্যমে তারা জানতে পারছেন। এতে দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও সুফল পাওয়া যাবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে নানা অগ্রগতি হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক দেশ এবং দেশের মানুষ এমনকি প্রবাসীরাও অনেক বিষয়ে জানেন না। বিএসইসির চেয়ারম্যান রোডশোর মাধ্যমে দেশের উন্নয়নগুলো তুলে ধরেছেন। এর সুফল ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে ‘রোড শো’ করার পর বিভিন্ন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, মধ্যস্থতাকারী ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ করছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ডন গ্লোবাল। এছাড়া ব্রিটিশ ও চীনারা বড় আকারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে কাজ করছে। বিনিয়োগের জন্য চীনারা একটি ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়েছে। এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে