লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কৃষিঋণ বিতরণ

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কৃষিঋণ বিতরণ
বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় দেশের কৃষিখাতকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। নিজস্ব উৎপাদনের মাত্রা বাড়াতে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। যেখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেশিরভাগ ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। তাতে দেখা যায়, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও ২ হাজার ১৯ কোটি টাকা বেশি বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ গত অর্থবছরের জন্য কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। কিন্তু আলোচ্য সময়ে বিতরণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।

দেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এমন বাস্তবতায় কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে প্রতিবছর কৃষি ও পল্লীঋণ নামে নীতিমালা প্রণয়ন করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালার আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক-পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নও তদারকি করা হয়। প্রথা অনুযায়ী এবারও কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণের নীতিমালা শিগগিরই জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় অন্য ঋণের চেয়ে কৃষি ও পল্লীঋণের সুদহার তুলনামূলক কম। গত অর্থবছরে সুদহার নির্ধারণ করা ছিল সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ। তবে সব কৃষক এই সুদহারে ঋণ পাননি। কারণ ব্যাংকগুলোর এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) নির্ভরতার কারণে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের ঋণ পেতে ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ৮ ব্যাংক
কৃষিঋণ বিতরণে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করা হলেও সরকারি-বেসরকারি আটটি ব্যাংক কাঙিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এদের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বেসিক ব্যাংক; বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইলসামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং মধুমতি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকের তালিকায় থাকা এবি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য ছিল ৫২১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ দিয়েছে ১৬৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। সরকারি বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫৭ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৭৩২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২২৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দিয়েছে মাত্র ৭৭ কোটি টাকার কাছাকাছি। মধুমতি ব্যাংক ৯০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও এর বিপরীতে ঋণ বিতরণ করেছে ৭ কোটি টাকার কিছু বেশি। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ১৩ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল ৬১২ কোটি টাকা কিন্তু তারা বিতরণ করেছে ১৭১ কোটি যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৬২টি ব্যাংক। এরমধ্যে সবাই কৃষি ঋণে অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি দেশে কার্যরত আটটি বিদেশি ব্যাংকের সবাই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে। অন্যদিকে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যেই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষককে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অর্থসংবাদ/এমআই

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ