বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছরে দেশের গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার কমেছে। আর আন্তর্জাতিক ব্যালান্স অব পেমেন্টস এবং ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী, সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ১০ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বা ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বিদায়ী অর্থবছর শেষে আন্তর্জাতিক বিপিএম-৬ মানদণ্ড অনুযায়ী, রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছরে ছিল ৩৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রিজার্ভ কমেছে ৮ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
বিদায়ী অর্থবছর শেষে যে পরিমাণ রিজার্ভ ছিল, তা দিয়ে সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ছয় মাসের বেশি।
গত বছরের এপ্রিলে রাশিয়া-ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ডলার সংকট শুরু হয়। রিজার্ভ থেকে
ডলার বিক্রি ও নানা পদক্ষেপের পর ডলার সংকট কিছুটা কমেছে। তবে রিজার্ভের মজুত ৪৮ বিলিয়ন থেকে দুই বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছিল ৭৬২ কোটি ডলারের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভের পরিমাণ দ্রুত কমছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোয় এখনও ডলারের সংকট কমেনি। প্রতিদিনই কেনার বিপুল চাহিদা আসছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে আমদানি চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়।
এদিকে ডলারের দাম গত দেড় বছরে ৮৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৯ টাকা। এতে খাদ্য ও পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ১০ শতাংশ। এখন আমদানি দায় পরিশোধে ডলারের দাম ১০৯ টাকা। প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম এখন ১০৯ টাকা ও রপ্তানি আয়ে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর ডলারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ।
গত ১৩ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে রিজার্ভ গণনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফ থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবেই তা করা হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে আইএমএফের সদস্য দেশগুলো বিপিএম-৬ মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাবায়ন করে আসছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তা শুরু করতে সময় নিয়েছে প্রায় এক যুগ। বিপিএম-৬ মূলনীতি অনুযায়ী, হিসাব করা রিজার্ভও বাংলাদেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ নয়। নিট রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে আইএমএফ থেকে নেয়া এসডিআরসহ স্বল্পমেয়াদি বেশ কিছু দায় বাদ দেয়া হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
ডলার সংকট কাটাতে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড় দিয়েছে সংস্থাটি। তবে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বেশ কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল, ৩০ জুনের মধ্যে বিপিএম-৬ মূলনীতি অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।
গত ২৬ জুলাই শেষে বাংলাদেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
অর্থসংবাদ/এসএম
 
                         
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                