গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা (ওটিসি মার্কেট বাদে) ২ শতাংশ কমেছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২০ দশমিক ৭ টনে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ওটিসি বা ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট বলতে মূলত এমন বিকেন্দ্রীকৃত বাজারকে বোঝায়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নির্দিষ্ট কোনো এক্সচেঞ্জের পরিবর্তে সরাসরি নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সম্পাদন করে। বিশ্ববাজারে স্বর্ণ কেনাবেচার ক্ষেত্রে ওটিসি বাজারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ডব্লিউজিসি জানায়, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে স্বর্ণের চাহিদা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি দায়ী। এর মধ্যে একটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় স্বর্ণ কেনার গতি ধীর হয়ে যাওয়া, অন্যটি প্রযুক্তি খাতে নিম্নমুখী চাহিদা।
প্রান্তিকভিত্তিক চাহিদা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে জুয়েলার্স ও বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বর্ণের চাহিদা ছিল বলিষ্ঠ। ফলে ওই সময় ধাতুটির বাজারদরও ছিল ঊর্ধ্বমুখী ধারায়। স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদার অর্ধেকই আসে জুয়েলার্সদের কাছ থেকে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের কাছে ধাতুটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। ফলে চাহিদা কমা-বাড়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরাও বড় ভূমিকা পালন করেন।
অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মন্দার আশঙ্কায় গত বছর দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় রেকর্ড পরিমাণ স্বর্ণ কিনেছিল। ফলে ওই সময় ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা ১১ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। চলতি বছরের প্রথমার্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ৩৮৬ দশমিক ৯ টন স্বর্ণ কিনেছে, যা ২০০০ সালের পর সর্বোচ্চ। উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোয় ব্যাপক হারে ধাতুটির বেচাকেনা হচ্ছে।
ডব্লিউজিসি জানায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্বর্ণের বার ও মুদ্রা কেনাবেচার পরিমাণও বেড়েছে। আর এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে তুরস্ক। বছরের ব্যবধানে বার ও মুদ্রায় বিনিয়োগ ৬ শতাংশ বেড়ে ২৭৭ টনে উন্নীত হয়েছে। তবে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডগুলো থেকে (ইটিএফ) বিনিয়োগকারীদের জন্য মজুদকৃত স্বর্ণের বহিঃপ্রবাহ কমেছে।
ডব্লিউজিসি জানায়, ওটিসি বাজার বাদে চাহিদা কমলেও ওটিসিসহ ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা ৭ শতাংশ বেড়েছে। মোট চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৫ দশমিক ২ টনে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বজুড়ে খনি থেকে ধাতুটির উত্তোলন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮১ টনে।
ঊর্ধ্বমুখী দাম সত্ত্বেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্বর্ণালংকার ব্যবহারে ধাতুটির চাহিদা ৩ শতাংশ বেড়েছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭৬ টনে। অলংকার উৎপাদনে চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৪৯১ টনে।
এদিকে প্রযুক্তি খাতে ধাতুটির চাহিদা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ কমেছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৪ টনে। অন্যান্য শিল্প খাতে চাহিদা ১ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৬ টনে দাঁড়িয়েছে।
অর্থসংবাদ/এসএম