বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা যায়, তার উপায় খুঁজছে। তবে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের শঙ্কা, এতে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, কৌশল ও তথ্য ফাঁস হতে পারে।
তবে কর্মীরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে এখন চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন। যেমন ই-মেইল লেখা, নথিপত্রের সামারি বা সারসংক্ষেপ তৈরি ও প্রাথমিক গবেষণার কাজে চ্যাটজিপিটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
জুলাই মাসের ১১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করেছে রয়টার্স ও ইপসোস। জরিপে অংশ নেওয়া ২৮ শতাংশ বলেছে, কাজের ক্ষেত্রে তারা নিয়মিতভাবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে। যদিও ২২ শতাংশ সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে, তাদের নিয়োগদাতারা এই প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন।
তবে জরিপে অংশ নেওয়া ১০ শতাংশ মানুষ বলেছে, তাদের কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে এআই টুল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ২৫ শতাংশ বলেছে, তারা ঠিক জানেন না, এআই টুল ব্যবহারে কোম্পানির অনুমতি আছে কি না।
চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের কারণে অবশ্য আরেক ধরনের বিপদে পড়েছে কোম্পানিগুলো। সেটা হলো, কোম্পানির কর্মীরা যখন এতে তথ্য প্রবেশ করান, সেই তথ্য সেখানে থেকে যায়। সেই তথ্য দিয়ে এআই নিজেকে আরও প্রশিক্ষিত করতে পারে। ফলে যেসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ার মতো নয়, সেই তথ্য চ্যাটজিপিটির ভান্ডারে থেকে যেতে পারে। ফলে কোম্পানির মালিকানাধীন তথ্য আরেক কোম্পানির হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এর একটি কারণ হলো, মানুষ ঠিক জানে না, এ ধরনের জেনারেটিভ এআই ঠিক কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।
এ বিষয়ে রয়টার্স ওপেন আইএর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে তাদের সাম্প্রতিক এক ব্লগপোস্টে করপোরেট অংশীদারদের আশ্বাস করা হয়েছে যে প্রত্যক্ষ অনুমতি দেওয়া না হলে তাদের তথ্য দিয়ে এআইকে প্রশিক্ষিত করা হবে না।
গুগলের বার্ডের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। মানুষ যখন এটি ব্যবহার করে, তখন বার্ড ব্যবহারকারীদের টেক্সট, স্থান ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে। কোম্পানি অবশ্য ব্যবহারকারীদের অতীত কর্মকাণ্ডের তথ্য মুছে ফেলার অনুমতি দেয় এবং ব্যবহারকারীরাও এসব তথ্য মুছে ফেলার অনুরোধ করতে পারেন। তবে গুগলও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মাইক্রোসফটও তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হয়নি।
ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক কর্মী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাঁরা ই-মেইল লেখার মতো সাধারণ কাজে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন, যদিও কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় না।
ওই কর্মী আরও বলেন, দলের সদস্যদের জন্য মজার আমন্ত্রণপত্র বানানো, তাঁদের বিদায়ী ই-মেইল লেখার মতো কাজে চ্যাটজচিপিটি ব্যবহার করা হয়। সেই সঙ্গে সাধারণ অনুসন্ধানের কাজেও এটি ব্যবহার করেন তাঁরা।
অর্থাৎ অনুমোদন না থাকলেও টিন্ডার কর্মীরা কখনো কখনো জেনেরিক বা সামগ্রিকভাবে প্রযোজ্য এমন কাজে চ্যাটচিপিটি ব্যবহার করেন, যেখানে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তথ্য ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকে না। তবে এটা ঠিক নিশ্চিত নয় যে টিন্ডার কর্মীরা কীভাবে তা ব্যবহার করেন। যদিও টিন্ডার বলেছে, তথ্যের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য তারা কর্মীদের নিয়মিত নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
এদিকে মে মাসে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস তাদের সব কার্যালয়ে কর্মীদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এক কর্মী কোডিংজনিত সমাধান পেতে চ্যাটজিপিটিতে কোম্পানির স্পর্শকাতর একটি কোডিং তুলে দিয়েছেন, এটা জানার পর স্যামসাং এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি গুগলও কর্মীদের বার্ড ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এআই চ্যাটবট ব্যবহারে এখনই পাইকারি হারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কিছু হয়নি; কারণ এগুলো ব্যবহারে মানুষের সক্ষমতা বাড়ে। তবে তা ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার সুযোগ আছে।
অর্থসংবাদ/এমআই