জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে সোমবার (১৩ আগস্ট) ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩’ জারি করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ বছর বয়সে যিনি কর্মসূচিতে যুক্ত হবেন, তিনিই সর্বোচ্চ সুবিধা পাবেন। আপাতত সরকার চার ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু করছে। এগুলো হচ্ছে- প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা। এ চার ধরনের কর্মসূচিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ জমার সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা মাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে পেনশন সুবিধার আওতায় আসতে পারবেন। এ বিধিমালায় কোন শ্রেণির মানুষ, কোন ধরনের পেনশনে মাসে কত টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে মাসে কত টাকা করে পাবেন, তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পেনশন স্কিমের প্রবাস কর্মসূচি হচ্ছে প্রবাসীদের জন্য, প্রগতি কর্মসূচি হচ্ছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য, সুরক্ষা স্কিম হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য আর সমতা স্কিম হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। বৃহস্পতিবার ‘ইউপেনশন’ নামক ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করা হবে এবং এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই দিন থেকেই যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। এর বাইরে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও যেকোনো ধরনের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য পেনশন কর্মসূচিটি কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তাঁরা পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধিত হতে পারবেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি নিয়ে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন যাঁরা, তাঁরাও পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তাঁরা যে সুবিধা ভোগ করে থাকেন, তা তাঁদের বাদ দিতে হবে।
দেশে বা বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকেরা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদনের বিপরীতে একটি ইউনিক আইডেনটিটি নম্বর (ইউআইডি) দেওয়া হবে। আবেদনে উল্লেখ থাকা আবেদনকারীর মুঠোফোন নম্বর এবং অনিবাসীদের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই–মেইলের মাধ্যমে ইউআইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা দেওয়ার তারিখ জানানো হবে।
কি পরিমাণ চাঁদা দিলে কত টাকা পেনশন মিলবে-
প্রবাস স্কিম:
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১০ বছর মাসিক ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিলে পেনশন পাবেন ৭ হাজার ৬৫১ টাকা। সমপরিমাণ অর্থ ৪২ বছর দিলে মাসিক পেনশনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকায়।
প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ১০ বছর কিস্তি দিলে পেনশন মিলবে মাসিক ১৫ হাজার ৩০২ টাকা করে। আর সমপরিমাণ অর্থ ৪২ বছর দিলে প্রতি মাসে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা পেনশন মিলবে।
প্রগতি স্কিম:
বেসরকারি চাকরিজীবিরা প্রগতি স্কিমের আওতায় থাকবেন। প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা করে সর্বনিম্ন ১০ বছর জমা দিলে মাসিক পেনশন হবে ৩ হাজার ৬০ টাকা। আর ৫ হাজার টাকা করে ১০ বছর জমা দিলে পেনশনের পরিমাণ হবে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা।
মাসিক দুই হাজার টাকার কিস্তি ৪২ বছর জমা দিলে প্রতি মাসে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা পেনশন পাবেন বেসরকারি চাকরিজীবিরা। আর ৪২ বছর পর্যন্ত মাসে ৫ হাজার টাকা করে কিস্তি দিলে পেনশন মিলবে মাসিক ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।
সুরক্ষা স্কিম:
স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এই স্কিমের আওতাভুক্ত থাকবেন। প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে ১০ বছর কিস্তি দিলে তাঁরা মাসিক ১ হাজার ৫৩০ টাকা পেনশন পাবেন। একই পরিমাণ অর্থ ৪২ বছর জমা দিলে পেনশন পাবেন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে।
সুরক্ষা স্কিমের আওতায় মাসে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জমা দেওয়া যাবে। এতে ১০ বছর পর পেনশন পাওয়া যাবে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা করে। আর ৪২ বছর ধরে কেউ মাসিক ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিলে পেনশন পাবেন মাসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।
সমতা স্কিম:
দারিদ্রসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠী সমতা স্কিমের আওতায় থাকবেন। তাদের মাসিক চাঁদার পরিমাণ হবে ১ হাজার টাকা। তবে এর মধ্যে ৫০০ টাকা করে সরকার জমা দেবে। অর্থাৎ এই স্কিমের আওতায় যারা থাকবেন তাদেরকে ৫০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। ১০ বছর এ টাকা জমা দিলে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ১ হাজার ৫৩০ টাকা। আর ৪২ বছর জমা দিলে মাসিক পেনশন হবে ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা।
পেনশন স্কিম বিধিমালায় বলা হয়েছে, পেনশনের চাঁদা জমা দিতে হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে। আর জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান এবং তফসিলি ব্যাংকের যেকোনো শাখার মাধ্যমে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাঁদা দিতে না পারলে পরের এক মাসের মধ্যে জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেওয়া যাবে। এক মাস পার হলে পরের প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে হিসাব সচল করা যাবে। মাসের নাম উল্লেখ করে অগ্রিম চাঁদা দেওয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছে। চাঁদা মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে দেওয়ারও সুযোগ থাকবে।
চাঁদাদাতা নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহনির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিয়ের ব্যয় মেটাতে তাঁর জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন, যা শোধ করতে হবে ২৪ কিস্তিতে।