এশিয়ার প্রধান দেশগুলোয় চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে উদ্যোক্তা তহবিল গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধেও সার্বিকভাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তহবিলের সূচক নিম্নমুখী। ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রভাবশালী বাজারে উদ্যোক্তা তহবিলের শিথিলতাকে অঞ্চলের জন্য সতর্কতা হিসেবে উপস্থাপন করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি ডিলস্ট্রিট এশিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
ডিলস্ট্রিট এশিয়ার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তহবিল সার্বিকভাবে চলতি বছরের জন্য অনুকূল ছিল না। এমনকি ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতের তহবিল ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকের তহবিলের চেয়ে কম। তহবিলের পতন সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ পতন ঘটেছে তহবিলের। বিদ্যমান উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোয় তহবিল ছিল ২১৩ কোটি ডলার, বিপরীতে ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৫১৩ কোটি ডলার।
ইন্ডিয়া ডিল রিভিউ অনুসারে, ভারতে বেসরকারি ইকুইটি ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগ ৫৭ শতাংশ কমেছে দ্বিতীয় প্রান্তিকে। দেশের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ৩২২ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে সময়টিতে। ২০২২ সালের একই সময় তহবিলের সংগ্রহ ছিল ৭৫৬ কোটি ডলার। তবে চীনের উদ্যোক্তা তহবিল ছিল তুলনামূলক স্থিতিশীল। গ্রেটার চায়না ডিল রিভিউ অনুসারে, বেসরকারি কোম্পানিগুলো ১ হাজার ৯০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সংগ্রহ ছিল ১ হাজার ১২৮ কোটি ডলার।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার তহবিল কার্যক্রমেও উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ার বাজার পর্যবেক্ষক ও ভার্টেক্স ভেঞ্চার্সের অংশীদার গ্যারি পি খোয়েং বলেছেন, ‘মোটাদাগে আমরা এখন ২০২৩ সালের শেষদিক ও ২০২৪ সালের শুরুর দিকের পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী।’ ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইন্দোনেশিয়ার উদ্যোক্তা তহবিলকে অতিক্রম করে গেছে ভিয়েতনাম। ইন্দোনেশিয়ার সংগৃহীত তহবিল এ সময়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেখানে একই সময়ে ভিয়েতনামের উদ্যোক্তা তহবিল দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তবে তার চেয়েও এগিয়ে সিঙ্গাপুর। দেশটিতে উদ্যোক্তা তহবিল দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ১২৪ কোটি ডলার।
দক্ষিণ এশিয়ার উদ্যোক্তা খাত দীর্ঘদিন বেশ স্থিতিশীল ছিল। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় নিম্নমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাত্র ৫২টি উদ্যোক্তা কোম্পানি প্রাথমিক মূলধন নিশ্চিত করতে পেরেছে দ্বিতীয় প্রান্তিকে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ কম ও আগের বছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কম। তহবিল গঠনের এ নিম্নমুখী প্রবণতা উদ্যোক্তা ব্যবসার পাটাতন তৈরি, পণ্যের অগ্রগতি, নিয়োগ, প্রচারণা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে উদ্যোক্তা তহবিল কেবল চীনের ক্ষেত্রেই ২০২২ সালের সীমারেখা অতিক্রম করেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধের তহবিল ২০২২ সালের প্রথমার্ধের চেয়ে বেশি হয়েছে দেশটিতে। জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত দেশটিতে তহবিল সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য উদ্যোক্তা তহবিল চলতি বছরের প্রথমার্ধে গত বছরের একই সময়ের মাত্র ৪৪ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্যোক্তা তহবিল ৪২০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৬ শতাংশ কম। ২০২৩ সালে প্রথমার্ধে ভারতের সংগৃহীত উদ্যোক্তা তহবিল গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে সংগৃহীত তহবিলের অর্ধেক। চলতি বছরে তহবিল উত্তোলিত হয়েছে ৬৫৮ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৬ শতাংশ কম।
ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্যোক্তা বিনিয়োগ চলতি বছরের প্রথমার্ধে নিম্নমুখী প্রবণতা প্রদর্শন করছে। ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে চীনও যুক্ত হয়েছে মিছিলে। ফলে সার্বিকভাবে প্রভাবিত হয়েছে এশিয়ার অর্থনৈতিক সূচক।
অর্থসংবাদ/এসএম