অপ্রত্যাশিতভাবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরেছে বৃটিশ অর্থনীতি। জুনের উষ্ণ ও স্থিতিশীল আবহাওয়ার কারণে অবকাশযাপনসহ অনেক ব্যবসা কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে দেশটিতে। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছে দেশটির পরিসংখ্যান বিভাগ। খবর এপি।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এপ্রিল থেকে জুন সময়ে অর্থনীতি দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, যা প্রথম প্রান্তিকে রেকর্ড দশমিক ১ শতাংশের চেয়ে বেশি। এ বৃদ্ধি অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকার পূর্বাভাস করেছিলেন তারা।
এ বৃদ্ধি সত্ত্বেও শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট গ্রুপ অব সেভেনের (জি সেভেন) মধ্যে ব্রিটেনই একমাত্র দেশ, যারা এখনো মহামারীকালীন ক্ষত পুষিয়ে উঠতে পারেনি। অনেক অর্থনীতিবিদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করেছেন, যার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও ব্যয় বেড়েছে। রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন থিংক ট্যাংকের গবেষণা পরিচালক জেমস স্মিথ বলেছেন, ‘বড় দৃশ্যপট হচ্ছে ২০২২ সালের শুরু থেকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। পুরোপুরি মন্দার ঘটনা ছাড়া গত ৬৫ বছরের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি।’
দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইতিবাচক ফলাফল এসেছে মূলত জুনের মাসিক দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে। এ মাসের গরম আবহাওয়ার কারণে পাব (বিয়ার, পানীয় ও খাদ্য বিক্রয়কেন্দ্র) ও রেস্তোরাঁগুলোর বিক্রি বেড়েছিল। ব্রিটেনের আবহাওয়ার রেকর্ড অনুযায়ী জুন ছিল সবচেয়ে উষ্ণ মাস। অন্যদিকে জুলাই ছিল দেশটির সর্বকালের আর্দ্রতম মাস। ফলে জুনে যে লাভ হয়েছিল জুলাইজুড়ে তার উল্টো চিত্র প্রত্যাশা করা হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে ব্রিটিশ অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং বিভিন্ন সেক্টরে বেশকিছু ধর্মঘট সত্ত্বেও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত মন্দা সত্ত্বেও ব্রিটেন প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে, তবে শিগগিরই এ প্রবৃদ্ধি প্রবণতা শীর্ষে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে না।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) অর্থনীতিতে রাতারাতি কোনো উন্নতি হবে বলে আশা করছে না। এ মাসের শুরুর দিকে বিওই বেঞ্চমার্ক সুদের হার গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে বাড়িয়েছিল। সে সময়ই ব্যাংক বলেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানতে অল্প সময় ঋণের খরচ বেশি থাকবে।
সুদহার বেশি থাকলে ভোক্তা বা ব্যবসার জন্য বাড়ি, গাড়ি বা যন্ত্রপাতি কেনার খরচ বেড়ে যায়। এগুলো কিনতে ঋণ নিতে হয় এবং ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পায়, যা মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করে। এটি অবশ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চাপে ফেলে দেয়। তবে বিওইর আত্মবিশ্বাস আগামী বছরগুলোয়ও ব্রিটিশ অর্থনীতি মন্দা দশায় পড়বে না। এমনকি বেকারত্ব বাড়তে শুরু করলেও তা মন্দায় পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করবে না।
কভিড মহামারীর ক্ষত কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে তেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ফলে উচ্চ জ্বালানি ব্যয়ের ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা বিশ্বেই দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে।
অর্থসংবাদ/এসএম