নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) ঢাকা কসমোপলিটন এবং সাথী বাংলাদেশের যৌথ উদ্দ্যোগ ‘প্রজেক্ট অনন্যা’। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে ১৩০ জন মেয়েকে দেড় বছরের জন্য ৭৮০টি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্যাড বিতরণ করা হয়।
ঋতুস্রাবের শুরু মানেই জীবনে নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। তবুও ঋতুস্রাবের সময় অসংখ্য কিশোরীই শিকার হয় নিন্দা, হয়রানি আর সামাজিক অজ্ঞতার। সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়গুলোতে, নিরাপদ মাসিক অনুশীলন সম্পর্কে অসচেতনতা এবং স্যানিটারি ন্যাপকিনের অপর্যাপ্ততার ফলে অনেকেই রয়েছেন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে।
প্রজেক্টের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারীতে শান্তিবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি কর্মসূচি পালিত হয়। যার প্রভাব সম্পর্কে একটি জরিপ করা হয় আগস্ট মাসে। পরবর্তীতে এই জরিপের প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে ২২ আগস্ট শান্তিবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় পর্ব পরিচালিত হয়। মাসিক কিটের যথাযথ ব্যবহার, মাসিক স্বাস্থ্য ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন নারীর ক্ষমতায়ন ও জীবনের মান উন্নয়নের মুখ্য ধাপ।
প্রজেক্টটির নেতৃত্ব দেন ২০২৩ সালে জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটনের লোকাল ডিরেক্টর খন্দকার নাসিফ আক্তার। প্রজেক্ট চলাকালীন জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটন ও সাথী বাংলাদেশের সহযোগিতায় শান্তিবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও নারী কর্মীদের মাঝে ২৬০টি মাসিক কিট বিতরণ করেছে। প্রথম থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ৭৮০টি পুনঃব্যবহারযোগ্য প্যাড, ৫২০টি অন্তর্বাস এবং ২৬০টি সাবান বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি পুনঃব্যবহারযোগ্য প্যাড ৮ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই একটি কিট ১ বছরের জন্য যথেষ্ট। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন সম্পর্কে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেখানে ঋতুস্রাবের পাশাপাশি গুরুত্ব আরোপ করা হয় বিভ্রান্তিকর মানসিকতা প্রতিরোধের উপায়ে।
আরেকটি সেমিনার পরিচালনা করেন ইগনাইট এভোলিউশনের প্রতিষ্ঠাতা, সিইও এবং প্রশিক্ষক ফারিয়া হাসিন। যার মূল প্রতিপাদ্যই ছিলো প্রিম্যানস্ট্রুয়াল সিনড্রোম এবং এটি মোকাবেলার নানা পন্থা। প্রথম ধাপের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায় যে প্রায় ৩০ জন মেয়ের মধ্যে ২৮ জনই মাসিক চলাকালীন ‘সাথী পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্যাড’ ব্যবহার করছে। এই মেয়েদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ তাদের পরবর্তী মাসিক চক্রের জন্য পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্যাডগুলি সংরক্ষণ করছে। ১০০ শতাংশ মেয়েদের মতে ঋতুস্রাব ভিত্তিক আলোচনাগুলো ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাথী পুনঃব্যবহারযোগ্য প্যাডগুলি সাশ্রয়ী, সহজ ব্যবহারযোগ্য়, স্বাস্থ্যকর এবং সেইসাথে পরিবেশ বান্ধব। জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটন স্থায়ী প্রভাব নিশ্চিত করতে একাধিক ধাপে এই প্রজেক্টটি পরিচালনা করেছে।
২০২৩ সালের জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটনের লোকাল প্রেসিডেন্ট সামিহা আক্তার বলেন, খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে ঋতুস্রাব একটি অপ্রকাশিত বিষয় এবং আমাদের লক্ষ্য ‘প্রজেক্ট অনন্যা’ এর মাধ্যমে মাসিক স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করা।
জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) হল তরুণ নাগরিকদের বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় নেটওয়ার্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস, মিসৌরিতে এর সদর দপ্তর অবস্থিত। বর্তমানে সমাজের উন্নয়নের জন্য জেসিআই বাংলাদেশে ৫০০০ সদস্য সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটন হল জেসিআই বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটন ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গত বছর ১০ বছর পূর্ণ হয়। জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটন নারীর ক্ষমতায়ন, মানসিক স্বাস্থ্য, নাগরিক অধিকার, আইনি অ্যাডভোকেসি ইত্যাদির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে গত দশ বছরে অসংখ্য প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটন হল তরুণ পেশাদার এবং উদ্যোক্তাদের একটি গতিশীল নেটওয়ার্ক।
অর্থসংবাদ/এসএম