১. খিদে না লাগলেও খাওয়া
আমরা প্রায়ই কিছুনা কিছু খেতে থাকি। এমনকি চিপস, চকলেট জাতীয় খাবার যা আমরা খেতে থাকি ক্ষুধা না থাকলেও। এর কারণ হলো আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ক্ষুধা আর তৃপ্তির সামঞ্জস্য না হলে আমরা অতিরিক্ত খেতে থাকি। এর ফলে ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্য উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ক্ষুধা ব্যতিত খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
২. ঘুমানোর সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করা
গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল এবং সাদা আলোর দিকে তাকিয়ে আপনি আপনার মস্তিষ্কে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ করতে বাধা দিচ্ছেন। এই হরমোন আপনার শরীরকে ঘুমের সময়টা জানিয়ে দেয়। মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ না করে আপনি ঘুম পাওয়া বা ভালো ঘুম দিতে পারবেন না। তাই রাত জাগার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। এর কারণে পুরো দিন ক্লান্তিময় কাটে। ক্লান্ত শরীরে আপনি যাই হোক অন্তত সৃজনশীল চিন্তা করতে পারবেন না। এতে আপনার উৎপাদনশীলতা কমে যায়। ঘুমের আগে যথাসম্ভব ফোন থেকে দূরে থাকুন।
৩. অভিযোগ করা
বিজ্ঞান বলছে, নেতিবাচকতা প্রকাশ করার প্রবণতা আমাদেরকে শুধুমাত্র ভালো বোধ করায় না বরং মানুষকে আরও খারাপ বোধ করায়। তার চেয়ে বেশি কষ্টকর হলো ক্রমাগত অভিযোগ করা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে, যা আমাদের আরও চাপে ফেলে দেয়। আক্ষরিক অর্থে অভিযোগ ব্যক্তিকে ধ্বংস করে দেয়। তাই আমাদের মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার প্রবণতা কমাতে হবে।
৪. সংগঠিত না থাকা
কর্মক্ষেত্র হোক বা পারিবারিক জীবন, সুসংগঠিত থাকা না থাকার ওপরেই সফলতা নির্ভর করে। অব্যবস্থাপনা পেশাদার সাফল্য আটকে রাখে। পাশাপশি ব্যক্তির উৎপানশীলতা হ্রাস করে। অগোছালো থাকা মানে আপনার প্রতিদিনকার কাজে অযথা অনেক সময় ব্যয় হওয়া। তাই প্রতিটা কাজে সুসংগঠিত থাকার অভ্যাস করুন।
৫. মাল্টিটাস্কিং
গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের মস্তিষ্ক একসাথে একাধিক কাজের থেকে শুধু একটি কাজ করাকে বেশি সফলভাবে গ্রহণ করে। কারণ মস্তিষ্ক একসাথে দুটি কাজ সফলভাবে করতে সক্ষম নয়। আমাদের প্রতিদিনকার রুটিন থেকে মাল্টিটাস্কিং করার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
৬. সঞ্চয়ের পরিকল্পনা না রাখা
আমাদের প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার কথা ভুলেই যাই। নিত্য খরচের পাশাপাশি আমাদের সঞ্চয়ের ব্যাপারেও সচেতন থাকা উচিত। সঞ্চয়ের অভ্যাস আমাদের ভবিষ্যতের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবে। সঞ্চয়ের অভ্যাসকে এক বাক্যে জীবনরক্ষাকারী অভ্যাস বলা যায়।
৭. ঋণগ্রস্ত থাকা
ঋণগ্রস্ততা বরাবরই মানসিক চাপে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ। কেননা আর্থিক চাপে থাকা আপনাকে মানসিক চাপের দিকে উদ্বুদ্ধ করে। এর ফলে স্বাস্থ্যঝঁকিও বেড়ে যায়। গবেষণা বলছে, উদ্বেগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা, বিষণ্নতা এবং পেশীতে টান বা পিঠের নিচে ব্যথাও হতে পারে। তাই ঋণমুক্ত থাকার অভ্যাস করা আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্যই কল্যাণকর।
৮. অযথা খোশগল্প করা
গবেষণা বলছে, অযথা গল্প গুজব বিরক্তি, ঈর্ষা আর অত্যাচারের সৃষ্টি করে। এর ফলে হজম কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং মানসিক চাপ তৈরি হয়। এই চাপেই উদ্বেগ, মাথাব্যথা ইত্যাদির সূতিকাগার। পাশাপাশি সাধারণ অসুস্থতার লক্ষণ পূর্ব থেকে থাকলে তা আরো বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া অযথা গাল-গল্প অন্যের ব্যক্তিগত জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। সুস্থ, স্বাভাবিক সম্পর্কের ক্ষতি করার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের পরিবেশও নষ্ট করে। আমাদের এই অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
৯. ধূমপান করা
ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারে এখন প্রায় সবাই সচেতন। ধূমপানের ফলে ক্যান্সার, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রের অসুখ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা বেশ কঠিন হলেও এটা থেকে সরে আসার অভ্যাস করা উচিত।
১০. অজুহাত দেওয়া
আমাদের জীবনের এমন অনেক মুহুর্ত আমরা পাই যখন আমরা ব্যর্থ হই। নির্দিষ্ট সময়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ছুঁতে পারিনা। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন ‘অজুহাত’। আমরা সবসময় অজুহাত দিয়ে সরে পড়তে চাই বা এড়িয়ে যাই। এর কারণেই কর্মক্ষেত্র বা যেকোনো ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ সময় সফল হতে পারিনা। নিজেদের ত্রুটি সম্পর্কে না ভেবে অজুহাত খুঁজতে ব্যস্ত থাকি। অজুহাত খোঁজার অভ্যাস থেকে আমাদের সরে আসার চেষ্টা করা উচিত।
অর্থসংবাদ/এসএম