মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মো. মনোয়ার হোসেন মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটির স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন।
পরিচয়পত্র পেশকালে রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গাদের যথাসম্ভব দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছাধীন প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
মিয়ানমারের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে তার সরকারের আন্তরিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশ করে শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) পরিচয়পত্র পেশকালে মিয়ানমারের রাষ্ট্রাচার বিভাগের প্রতিনিধিরা রাস্ট্রদূতকে দূতাবাসের প্রতিনিধিসহ হোটেল থেকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা যোগে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যান। সেখানে রাষ্ট্রাচার মহাপরিচালক তাকে স্বাগত জানান। এরপর রাষ্ট্রপতি ভবনের নতুন নির্মিত ক্রেডেনশিয়াল হলে রাষ্ট্রদূত আনুষ্ঠানিকভাবে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন। পরিচয়পত্র গ্রহণ করে চেয়ারম্যান বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
আলোচনার শুরুতেই স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মিন অং হ্লাইং রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেনকে অভিনন্দন জানান এবং উপস্থিত মিয়ানমার সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি একজন দক্ষ ও পেশাদার কূটনীতিককে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করার জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আলোচনাকালে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের প্রত্যাবাসন, বাণিজ্য সম্পর্ক, আকাশ, স্থল ও নৌ-পথে যোগাযোগ বৃদ্ধি, মানব পাচার, মাদক পাচার ও অস্ত্র চোরাচালানসহ প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা-সহযোগিতা, সামরিক সহযোগিতা এবং জনযোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে মতবিনিময় হয়।
বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে অভিহিত করে রাষ্ট্রদূত যথাসম্ভব দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছাধীন প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
চেয়ারম্যান এ বিষয়ে তার সরকারের আন্তরিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশ করে শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দুই প্রতিবেশী দেশের অধিকতর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে জোরালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং আন্তঃদেশীয় সংযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। চেয়ারম্যান জনস্বাস্থ্য কূটনীতিতে রাষ্ট্রদূতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত তার পরিচয়পত্র গ্রহণ করার জন্য চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারের লক্ষ্যে এবং একে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তার সহযোগিতা কামনা করেন।
অত্যন্ত আন্তরিক ও উষ্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত প্রায় ৪৫ মিনিট স্থায়ী এ আলোচনার শেষে রাষ্ট্রদূত স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল চেয়ারম্যানের শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ কামনা করেন। চেয়ারম্যান মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূতের কর্ম-মেয়াদের সাফল্য কামনা করেন এবং তার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান শোয়ে, স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের যুগ্ম-সচিব লে. জেনারেল ই এন উ, দূতাবাসের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) এবং ডিফেন্স অ্যাটাশে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদ/এসএম